পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৪
বিদ্যাসাগর-জীবনরিত।

চৌধুরী প্রভৃতির সহিত বৈঁচি-নিবাসী জমিদার বিহারীলাল মুখোপাধ্যায়ের ঋণগ্রহণ ও বিষয়-কর্ম্ম উপলক্ষে, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত বিহারী বাবুর পরিচয়, প্রণয় ও বিশেষ হৃদ্যতা জন্মে। এক সময়ে বিহারীবাবু কলিকাতায় আসিয়া কথাপ্রসঙ্গে অগ্রজকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিদ্যাসাগর মহাশয়! আমি অপুত্রক, স্ত্রীর মনে যদি কষ্ট হয়, একারণে পুনরায় দারপরিগ্রহ করিতে আমার ইচ্ছা নাই। অতএব আমি পোষ্যপুত্র গ্রহণ করিব, অভিপ্রায় করিয়াছি, নতুবা আমার বিষয়-সম্পত্তি অকারণ নষ্ট হইয়া যাইবে এবং আমাদের নাম লোপ হইবে।” ইহা শ্রবণ করিয়া তিনি বলিলেন, “যদি আমার মত গ্রহণ করেন, তবে আমার মতে দত্তকপুত্র না লইয়া, আপনার যাবতীয় সম্পত্তি দেশের হিতকর কার্য্যে সমর্পণ করুন। তাহাই কর্ত্তব্য ও তাহাই পরমধর্ম্ম, এবং তাহাই বহুকালস্থায়ী; কোন সভ্য রাজার সময়ে ইহার লোপ হইবে না। দাতব্য-বিদ্যালয় ও চিকিৎসালয় এবং অসহায় রোগীদিগের আহার ও থাকিবার স্থান দান করা এবং নিজ গ্রামের ও তাহার পার্শ্বস্থ গ্রাম সমূহের অন্ধ, পঙ্গু ও অনাথ প্রভৃতি নিরুপায় লোকদিগের দুঃখমোচনে যাবতীয় সম্পত্তি নিয়োজিত করা প্রধান ধর্ম্ম।” স্বৰ্গীয় বিহারীলাল বাবু আহলাদের সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই প্রস্তাবে অনুমোদন করিয়া, তাঁহাকে দ্বিতীয় উইলের আদর্শ প্রস্তুত করিতে অনুরোধ করেন। তদনুসারে তিনি একখানি নূতন উইল প্রস্তুত করাইয়া, বহুদশী উকিল-বাবুদিগকে দেখান, পরে ঐ আদর্শ উইলখানি বিহারীবাবুকে দেন। তিনি উহা পাঠ করিয়া, পরম আহ্বলাদিত হইলেন। সন ১২৭৭ সালের ২৫ শে শ্রাবণ ঐ উইল প্রস্তুত করিয়া যথারীতি রেজেষ্টারি করাইলেন। ইহার কিছুদিন পরে বিহারীলাল বাবুর মৃত্যু হইলে, ঐ উইলের সর্ভানুসারে তাঁহার বনিতা শ্রীমতী কমলেকামিনী দেবী দাতব্য-স্কুল, ডিস্পেনসারি ও হাঁসপাতাল জন্য সন ১২৮৪ সালের ৫ই শ্রাবণ, ইং ১৮৭৭ সালের ২৯ শে জুলাই, এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা ঐ বৎসরের শেষ পর্য্যন্ত হুগলি জেলার কালেক্টারিতে আমানত করিলেন