পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 বাল্যকালে অগ্রজ মহাশয় শস্যক্ষেত্রের নিকট দিয়া যাইবার সময়, ধানের শীষ লইয়া চর্ব্ব‌ণ করিতে করিতে যাইতেন। একবার যবের ক্ষেত্রের এক শীষ লইয়া, চর্ব্ব‌ণ করিতে করিতে যবের সুঙা গলায় লাগিয়া মৃতকল্প হন। পিতামহী অনেক কষ্টে গলায় অঙ্গুলি দিয়া, যবের শীষ নির্গত করেন, তাহাতেই রক্ষা পান।

 কালীকান্ত নানাপ্রকার কৌশল ও স্নেহ করিয়া শিখাইতে কিছুমাত্র ত্রুটি করেন নাই। তিনি আপনি সন্তান অপেক্ষাও অগ্রজ মহাশয়কে ভালবাসিতেন। গুরুমহাশয় অপরাহ্নে অপরাপর ছাত্রগণকে অবকাশ দিতেন; কেবল অগ্রজ মহাশয়কে তাঁহার নিকটে রাখিয়া, সন্ধ্যার পর নামতা ও ধারাপাতাদি শিক্ষা দিতেন। অধিক রাত্রি হইলে, প্রত্যহ স্বয়ং ক্রোড়ে করিয়া বাটীতে আনিয়া, পিতামহীর নিকট পহুছাইয়া দিতেন। গুরুমহাশয় একদিবস সন্ধ্যার সময় পিতৃদেবকে বলিলেন, “আপনার পুত্র অদ্বিতীয় বুদ্ধিমান, শ্রুতিধর বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। পাঠশালায় যাহা শিখিতে হয়, তৎসমস্তই ইহার শিক্ষা হইয়াছে। ঈশ্বরকে এখান হইতে কলিকাতায় লইয়া যাওয়া অত্যন্ত আবশ্যক হইয়াছে। আপনি নিকটে রাখিয়া ইংরাজী শিক্ষা দিলে ভাল হয়। এ ছেলে সামান্য ছেলে নয়, বড় বড় ছেলেদের অপেক্ষা ইহার শিক্ষা অতি উত্তম হইয়াছে। আর হস্তাক্ষর যেরূপ হইয়াছে, তাহাতে পুঁথি লিখিতে পরিবে।” তৎকালে বাঙ্গালা ছাপাখানা প্রায় ছিল না। যাহাদের হস্তাক্ষর ভাল হইত, তাহারা সংস্কৃত পুস্তক হাতে লিখিত। হস্তাক্ষর ভাল হইলে, তাহারা সাধারণের নিকট সম্মানিত হইত। একারণ অনেকে হস্তাক্ষর ভাল করিবার জন্য বিশেষ যত্ন পাইত। তৎকালে এপ্রদেশে সম্বন্ধ করিতে আসিলে, অগ্রে পাত্রের হস্তাক্ষর দেখিত, তৎপরে সম্বন্ধের স্থিরীকরণের ইচ্ছা করিত। অগ্রজকে কলিকাতা লইয়া যাইবার নাম শুনিয়া, জননীদেবী। উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। তৎকালে এপ্রদেশের কাহারও লেখাপড়া শিক্ষার জন্য কলিকাতা যাইবার রীতি ছিল না। ব্রাহ্মণতনয়গণ কেহ কেহ বাল্যকালে টোলে পড়িত।