পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
স্বাধীনাবস্থা।
২৫৯

ঐ প্রলাপ-সময়ে নিজের কালেজ ও স্কুলগুলির সম্বন্ধে নানাবিধ কথা কহিতে লাগিলেন। ২৩ শে আষাঢ় পুনরায় হিক্কা, বেদনা প্রভৃতি পীড়ার লক্ষণগুলি প্রবল হইতে লাগিল এবং ঐ সময় নেবা রোগের আরম্ভ হইয়াছে দেখিয়া, হকিমের চিকিৎসা বন্ধ হইল। ক্লোরোডাইন সেবন করায় বেদন ও হিক্কার হ্রাস হইল। উক্ত হকিম সাহেব উদারচরিত ভদ্রলোক; আন্তরিক যত্ন ও শ্রদ্ধাসহকারে চিকিৎসা করিয়াছিলেন। ২৪শে আষাঢ়, ডাক্তার হীরালাল বাবু ও বাবু অমূল্যচরণ বসু পরীক্ষা করিয়া, ২৫শে আষাঢ় পরামর্শজন্য ডাক্তার ম্যাকোনেল সাহেবকে আনাইলেন। উক্ত সাহেব পরীক্ষা করিয়া অসাধ্য বিবেচনায়, বাৰ্চ্চ সাহেবের সহিত পরামর্শ করিতে হইবে বলিয়া, তাঁহাকে আনাইবার উপদেশ দেন; কিন্তু ম্যাকোনেল সাহেব, এই পীড়া এলোপ্যাথি চিকিৎসার অসাধ্য বলায়, পরদিন ২৬ শে আষাঢ় বেল ৯টার সময় ডাক্তার শালজার সাহেব আসিয়া ভালরূপ পরীক্ষা করিয়া বললেন, “ষ্টমাকে ক্যানসার হয় নাই, কেবল পাকস্থলীতে টিউমার হইয়াছে; কিন্তু উহা মারাত্মক নহে, তবে এই যে নেবা উৎপন্ন হইয়াছে, ইহাই ইহাঁর পক্ষ মারাত্মক হইবার সম্ভাবনা। ইহা চরি পাঁচ দিনের মধ্যে উপশম হইলে হইতে পারে; কিন্তু ইহা অপেক্ষা পণ্ডিতের বয়োবাৰ্দ্ধক্য, শারীরিক দৌর্ব্বল এবং জীর্ণশীর্ণতা এই তিন কারণেই পীড়া উপশমের সম্ভাবনা অতি অল্প।” এই কথা বলায় তাঁহাকে বিদায় দিয়া, বৈকালে ম্যাকোনেল ও ভাক্তার বার্চ উভয়ে আসিয়া ও পরীক্ষা করিয়া অসাধ্য বলায়, ডাক্তার হীরালাল বাবু ও অমূল্য বাবুর এলোপ্যাথিক চিকিৎসা-নির্ব্বন্ধ খণ্ডন করিয়া, শালজার সাহেব দ্বারা চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। শালজার সাহেবের চিকিৎসায় বেদনা, হিকা, নেবা, প্রভৃতি লক্ষণগুলির হ্রাস হইতে লাগিল, কিন্তু কোষ্ঠবদ্ধ পীড়ার উদয় হইল। হিক্কার লক্ষণ পুনরায় বৃদ্ধি হইতে লাগিল। মধ্যে মধ্যে অম্লপিত্ত কমিতে লাগিল। ডাক্তার শালজার সাহেব প্রত্যহ তিন চারি বার আসিতে লাগিলেন। কোন দিবস কিছু কমে, কোন দিবস বৃদ্ধি হয়। হিক্কা বন্ধ না হওয়ায়, রজনীগন্ধ ফুল বাটিয়া সেবন করান হয়; তাহাতে যদিও হিক্কার অনেক হ্রাস হক্সাছিল, কিন্তু ঐ দিবসেই স্বল্প জ্বরের উদয় হয়। দিনে দিনে অল্পে অল্পে জ্বর বৃদ্ধ হইতে লাগিল। হিক্কাসম্বন্ধে রজনীগন্ধ ফুলের আর কোনও ক্ষমতা রহিল না। মুখমণ্ডল প্রভৃতির ও জীবনের শ্রী কমিয়া আসিতে লাগিল।

 ডাক্তার শালজার নিরাশ হইলেন এবং বলিলেন, “তোমরা অপরের দ্বারা চিকিৎসা করাইতে পার এবং অবশ্যক হইলে, আমি বন্ধুভাবে ও চিকিৎসক-