পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৫১

মহাশয়, সকলকে শ্লোক-রচনায় নিযুক্ত করিলেন। দাদা, পরিহাস করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহাশয়! কোন গোপালের বিষয় বর্ণনা করিব? এক গোপাল আমাদের সম্মুখে উপস্থিত রহিয়াছেন; আর এক গোপাল বহুকাল পূর্ব‌্বে‌ বৃন্দাবনে লীলা করিয়া অন্তৰ্হিত হইয়াছেন। এ উভয়ের মধ্যে কাহার বর্ণনা আপনকার অভিপ্রেত, স্পষ্ট করিয়া বলুন।” পূজ্যপাদ তর্কালঙ্কারমহাশয়, অগ্রজ মহাশয়ের এই কৌতুক-কার জিজ্ঞাসা-বাক্য শ্রবণ করিয়া বলিলেন, “বৃন্দাবনের গোপালের বর্ণনা কর।” অগ্রজ মহাশয় ঐ বিষয়ে পাচটি শ্লোক লিখিয়াছিলেন। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার শ্লোক পাচটি দেখিয়া পরম আহ্লা‌দিত হইয়াছিলেন। সেই পাঁচটি শ্লোক এই—

“যশোদানন্দকন্দা‌য় নীলোৎপলদলশ্রিয়ে।
নন্দগোপালাবালায় গোপালায় নমোহস্তু মে॥ ১॥
ধেনুরক্ষণদীক্ষায় কালিন্দীকূলচারিণে।
বেণুবাদনশীলায় গোপালায় নমোহস্তু মে॥ ২॥
ধৃতপীতদুকূলায় বনমালাবিলাসিনে।
গোপস্ত্রীপ্রেমলোলায় গোপালায় নমোহস্ত মে॥ ৩॥
বৃষ্ণিবংশাবতংসায় কংসধ্বং‌সবিধায়িনে।
দৈতেয়কুলকালায় গোপালায় নমোহস্তু মে॥ ৪॥
নবনীতৈকচৌরায় চতুৰ্বর্গৈকদায়িনে।
জগদ্ভাণ্ডকুলালায় গোপালায় নমোহস্তু মে॥ ৫॥

 অগ্রজ চারি বৎসর দর্শনশাস্ত্রের শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিয়া ষড়দর্শনে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয়, মধ্যে মধ্যে বলিতেন, “ঈশ্বরের ন্যায় বুদ্ধিমান ছাত্র আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ইহাকে পড়াইবার জন্য দর্শনশাস্ত্রে আমায় বিশেষরূপ দৃষ্টি রাখিতে হইয়াছিল; তজ্জন্য দর্শনশাস্ত্রে যে আমার বিশেষরূপ অধিকার জন্মিয়াছিল, তাঁহার সন্দেহ নাই। পড়াইবার সময় এরূপ বোধ হইত, যেন কতকাল পূর্ব্বে‌ ঈশ্বরের ঐ সকল