পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৫৩

মার্শেল সাহেবকে অনুরোধ করিতে যান। সাহেব বলেন, “ঈশ্বরচন্দ্র নামে সংস্কৃত-কলেজের এক ছাত্র আছে, তাহাকে এই কর্ম্ম দিবার মানস করিয়াছি। আমি যৎকালে সংস্কৃত-কলেজের অধ্যক্ষতা-কার্য্যে নিযুক্ত ছিলাম, সেই সময় হইতে বিশিষ্টরূপ অবগত আছি যে, ঈশ্বর অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সংস্কৃত ভাষায় বিশেষরূপ বুৎপন্ন।” সাহেবের প্রমুখাৎ ইহা শ্রবণ করিয়া, কালিদাস বাৰু বলেন, “তিনিও আমার আত্মীয় লোক, তিনি এ পদ পাইলে, আমি পরম আহ্লা‌দিত হইব।” এই বলিয়া কালিদাস বাবু প্রস্থান করেন। অনন্তর, মার্শেল সাহেব, জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চাননকে ডাকাইয়া বলেন, “তোমার ক্লাসের ছাত্র ঈশ্বর কোথায়? আমি তাহাকে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের কর্ম্ম দিব মানস করিয়াছি। কিন্তু ঈশ্বর নিতান্ত ছেলেমানুষ। গবর্ণমেণ্ট ছেলেমানুষ দেখিলে, এ পদ তাহাকে দেন কি না সন্দেহ।” ইহা শুনিয়া তর্কপঞ্চানন মহাশয় বলেন, “ঈশ্বর, ২২ বৎসর বয়সে সংস্কৃত-কলেজের ল-কমিটির পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হইবার পর, এক বৎসর বেদান্ত-শাস্ত্রের শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিয়াছে, তৎপরে দর্শন-শ্রেণীতে প্রায় চারি বৎসর সমগ্র দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছে। অতএব ঈশ্বরের বয়স এক্ষণে ২৭ বৎসর অতীত হইয়াছে।” সুতরাং সাহেব আর কম বয়সের আপত্তি করিতে পারিলেন না। নচেৎ কম বয়সে এ পদ পাইবার কোন আশা ছিল না। সাহেব, যৎকালে সংস্কৃত-কলেজের অধ্যক্ষ-পদে নিযুক্ত ছিলেন, সেই সময় হইতেই অগ্রজের প্রতি তাঁহার বিশেষ লক্ষ্য ছিল। তজ্জন্য তিনি বহুবাজার মলঙ্গা-নিবাসী বাবু রাজেন্দ্র দত্ত মহাশয় দ্বারা আমাদের বাসায় ঐ সংবাদ পাঠাইয়াছিলেন। ঐ সময়ে অগ্রজ দেশে অবস্থিতি করিতেছিলেন। পিতৃদেব, রাজেন্দ্রবাবুর প্রমুখাৎ এ সংবাদ-প্রাপ্তিমাত্রেই দেশে গমনপূর্ব্ব‌ক অগ্রজকে সমভিব্যাহারে লইয়া কলিকাতায় পঁহুছিলেন। পরদিন ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদপ্রাপ্ত্যভিলাষে, মার্শে‌ল সাহেবের নিকট আবেদন-পত্র প্রেরিত হইল এবং গবর্ণমেণ্ট, মার্শেল সাহেবের রিপোটে সম্মতি দান করিলেন।