পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৬৩

তর্কবাচস্পতির নাম ব্যক্ত করিলেন। সাহেব বলিলেন, “তারানাথ এখন কোথায় অবস্থিতি করেন?” অগ্রজ বলিলেন যে, “তিনি পূর্ব্বে সংস্কৃত-কলেজে অধ্যয়ন করিয়া, সর্ব্বোৎকৃষ্ট প্রশংসাপত্র পাইয়া, কয়েক বৎসর কাশীধামে অব-স্থানপূর্ব্বক, পাণিনি ব্যাকরণ ও বেদান্ত প্রভৃতি অধ্যয়ন করেন। সম্প্রতি অম্বিকাকালনায় চতুম্পাঠী স্থাপন করিয়া, বহুসংখ্যক ছাত্রকে শিক্ষা দিতেছেন।” এই কথা শুনিয়া; সাহেব বলেন, “তাহার চাকরি করিতে ইচ্ছা আছে কি না, অগ্রে জানা আবশ্যক।” ঐ দিবস অগ্রজ বাসায় আসিয়া, মাতৃঘসার পুত্র সর্বেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমভিব্যাহারে লইয়া, হাটখোলার ঘাটে গঙ্গা পার হইয়া, পদব্রজে কানা অভিমুখে যাত্রা, করিলেন। পরদিন বৈকালে তথায় উপস্থিত হইলে, বাচস্পতি ও তাঁহার পিতা অকস্মাৎ অগ্রজকে অবলোকন করিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন। অনন্তর বাচস্পতি মহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “এরূপ বেশে পদব্রজে এত পথ আসিবার কারণ কি?” অগ্রজ বলিলেন, “আপনি কলেজে অধ্যয়ন করিয়া যে প্রশংসাপত্র পাইয়াছেন, তাহা আমায় প্রদান করুন। আমি আপনার সার্টিফিকেট ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অধ্যক্ষ মার্শেল সাহেবকে দেখাইব। তিনি আপনাকে মাসিক ৯০ টাকা বেতনে সংস্কৃত-কলেজে ব্যাকরণের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষকতাকার্যের জন্য গবর্ণমেণ্টে লিখিবেন।” ইহা শুনিয়া বাচস্পতি মহাশয় ও তাঁহার পিতা পরম আলাদিত হইলেন, এবং প্রশংসাপত্রগুলি অগ্রজের হন্তে সমৰ্পণ করিলেন। প্রায় ত্রিশ ক্রোশ পথ পদব্রজে গমন করিয়া, সৰ্বেশ্বরের চরণদ্বয় স্ফীত ও তাহাতে বেদনা হইয়াছিল; অতঃপর আর চলিতে পারিবেন না বিবেচনায়, নৌকাররাহণে কলিকাতা যাত্রা করিলেন। পর দিবস কলিকাতায় উপস্থিত হইয়া, সমস্ত বিবরণ বলিয়া, বাচস্পতির সার্টিফিকেট ও আবেদনপত্র সাহেবকে প্রদান করিলেন।

 মার্শেল সাহেব রিপোর্ট করিলে পর, গবর্ণমেণ্ট, বাচস্পতি মহাশয়কে ৯০ টাকা বেতনের পদে নিযুক্ত করিলেন, এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ব্যাকরণের পণ্ডিতের