পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কোন বালিকার পাণিগ্রহণ-সময়ে বিপক্ষপক্ষ প্রতিবেশী সকল অনেক আপত্তি উত্থাপন করিয়াছিলেন। অগ্রজ মহাশয়, পরিশ্রম স্বীকার করিয়া, গতিবিধি ও উপবোধ অনুবোধ দ্বারা ঐ সকল আপত্তি খণ্ডন করিয়া দিতে ক্ষান্ত থাকিতেন না। তৎকালে বেথুন ফিমেল-স্কুলের চিরস্থায়িতার কোন আশাই ছিল না। পরিশেষে বেথুন সাহেব মহোদয়, অগ্রজ মহাশয়কে ঐ বিদ্যালয়ের অবৈতনিক সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত করিলেন। তিনি সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত হইয়া, ইহার উন্নতির জন্য কায়মনোবাক্যে বিলক্ষণ যত্নবান্ হইয়াছিলেন। বেথুন সাহেব, ফিমেল-স্কুলের বাটী-নির্ম্মাণার্থে স্বীয় প্রচুর অর্থের দ্বারা সিমুলিয়ায় স্বতন্ত্র স্থান ক্রয় করেন। বনিয়াদ্‌ খোঁড়া হইল, ক্রমশঃ ভিত্তি হইতে আরম্ভ হইল; ইত্যবসরে বেথুন সাহেব, কলিকাতার সন্নিহিত প্রায় দশ মাইল পশ্চিম জনাইগ্রামবাসী লোকদিগের অনুরোধের বশবর্ত্তী হইয়া, তথাকার স্কুল পরিদর্শনে গমন করেন। বর্ষাকাল, সুতরাং পথ অতিশয় কর্দ্দমময় হইয়াছিল; তজ্জন্য গাড়ী না চলাতে, শকট হইতে অবরোহণ করিয়া, পদব্রজেই কর্দ্দমোপরি গমন করিয়া বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। ইহার অব্যবহিত পরেই ভয়ানক জ্বরে আক্রান্ত হইয়া, কালের করাল-কবলে নিপতিত হন। ভারতের অদ্বিতীয় বন্ধু, বিদ্যোৎসাহী, সদ্গুণবিভূষিত, পরম দয়ালু বেথুন সাহেব মহানুভবের মৃত্যু-সংবাদে দেশীয় কৃতবিদ্য লোক ও বিদ্যালয়ের ছাত্রসমূহ বিষগ্ন-মনে মৃত মহাত্মার সদনে উপস্থিত হইয়া, শোক ও দুঃখ প্রকাশ করিতে লাগিলেন।

 অগ্রজ মহাশয়, সর্ব্বসমক্ষে রোদন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তাঁহার বদনমণ্ডল অশ্রুজলে প্লাবিত হইল, অন্যান্য লোকের উপদেশেও নিবৃত্ত হইলেন না। তিনি বাঙ্গালাদেশের বিদ্যালয়সমূহের উন্নতির জন্য নিরন্তর বেথুনের ভবনে যাইতেন। নিঃস্বার্থ, নির্লোভ, যথার্থ দেশহিতৈষী বেথুন সাহেব, তাহার প্রতি আন্তরিক স্নেহ ও মমতা প্রদর্শন করিতেন। বিশেষতঃ ভারতবর্ষের জেলাসমূহের মফঃস্বলে প্রায়ই বিদ্যালোচনার অভাব ছিল; অধিকাংশ প্রজাপুঞ্জ কৃষিবৃত্তি অবলম্বন করিয়া দিনপাত করিত। তাহাদের সন্তানগণ