পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা-সঙ্গীতে অনুরাগ।
২৬৫

হস্তে ফিরিত না। কেহ যদি ভিক্ষা করিতে গিয়া বলিত,— “আমার মা নাই,” তাহা হইলে বিদ্যাসাগরের চক্ষের জলে বুক ভাসিয়া যাইত। মাতৃপরায়ণ বিদ্যাসাগর তখন শতকর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া, সেই মাতৃহীন ভিক্ষুককে যাঞ্জতীত সাহায্য করিতেন। “মা নাই শুনিলে বিদ্যাসাগর, বিচারাচার করিতেন না, এ কথা অনেকেই জানিতেন। তাঁহার একজন প্রতিবেশী মুদী একবার একটা ভিক্ষুককে শিখাইয়া দিয়াছিল,—“বলিস্ আমার মা নাই?” বস্তুতঃ তাহার মা ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় কোন কারণে জানিতে পারেন, ভিক্ষুকের কথা মিথ্যা। সে যে মুদী দ্বারা শিক্ষিত হইয়াছিল, তাহাও তিনি জানিতে পারেন। ভিক্ষুককে তিনি বঞ্চিত করেন নাই; পরন্ত পুনরায় এরূপ মিথ্য বলিতে নিষেধ করিয়া দেন। প্রকৃতই অনেকেই মা নাই বলিয়া, তাঁহার নিকট ফাঁকি দিয়া অর্থ লইত।

 “মা” নামে বিদ্যাসাগর মন্ত্রমুগ্ধ হইতেন। “মা”ই যে তাহার জীবনের সাধন-মন্ত্র ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গানবাজনায় বড় সখ ছিল না। তবে কেহ কখন “মা” “মা” বলিয়া গান গাহিলে, তিনি স্থির থাকিতে পারিতেন না। গায়ককে তিনি যেন বুকের কলিজার ভিতর পুরিয়া রাখিতেন। একজন অন্ধ মুসলমান ভিক্ষুক, বেহালা বাজাইয়া শ্যামা সঙ্গীত গাহিত। সে সঙ্গীতে ‘মা’ ’মা’-ধ্বনি থাকিত। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাকে ডাকাইয়া পাই তাহার গান শুনিতেন। গান শুনিতে শুনিতে তিনি অশ্রুজল সংবরণ করিতে পারিতেন না। এই মুসলমানভিক্ষুক বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট সময় সময় যথেষ্ট সাহায্য পাইত। একবার তাহার ঘর পুড়িয়া গিয়াছিল।

৩৪