পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭০
বিদ্যাসাগর।

“তুমি তো রাঘব?” রাঘব একটু বিমর্ষ হইয়া কর্ণে হস্ত প্রদান করিল। তখন এক জন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া কানে কানে বলিয়া দিল—“উহাকে কৃষ্ণ রায় বলুন। রাঘব আপনাকে ‘বগড়ির কৃষ্ণ রায়’ দেবতা বলিয়া মনে করে। উহার উন্মাদের অনেক ছিট আছে। ও ব্যক্তি ব্রাহ্মণের চালে চলিয়া থাকে। ও বাগ্‌দীর অন্ন খায় না। এমন কি, ক্ষুধার মরিয়া যাইলেও ও বৈষ্ণবজাতীয় পৈতাধারীদিগেরও অন্ন গ্রহণ করে না। বিদ্যাসাগর মহাশয় সকল ব্যাপার বুঝিলেন। তিনি সহাস্য বদনে রাঘবকে প্রেমালিঙ্গন দিয়া আনন্দ-গদগদ-স্বরে বলিলেন—“তুমি কৃষ্ণ রায়?” রাঘবের আর আনন্দের সীমা রহিল না। বিদ্যাসাগর মহাশয় যত দিন বাড়ীতে ছিলেন, তত দিন রাঘবকে আপনার সম্মুখে সর্ব্বক্ষণ বসাইয়া রাখিতেন এবং তাহার সহিত তুষ্টিজনক কথাবার্ত্তা কহিতেন।

 এক দিন বিদ্যাসাগর মহাশয় বীরসিংহ গ্রামে অপন ঘরের “দাওয়ায়” বলিয়াছিলেন, এমন সমর মুটুক ঘোষ নামক এক সদ্গোপ তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসে। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার সাদর-সম্ভাষণ করিয়া তাহাকে উপরে উঠিয়া বসিতে বলিলেন। সে একটু ইতস্তত করিতেছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় তখন তাহাকে সেই দাওয়ার উপর হইতে দুই হাত দিয়া বলপুর্ব্বক তুলিয়া উপরে লইয়া বসাইলেন।

 এখানে সদাশয়তার দৃষ্টান্ত-উপলক্ষে যৌবনের বল-বিক্রমের কথা কিছু বলিয়া লইব। বিদ্যাসাগর মহাশয় বাল্যাবস্থার ন্যায় যৌবনেও ভীমপরাক্রম ছিলেন। তিনি বাল্যকালে কপাটী খেলিতে খেলিতে বলবান্ যুবককে ও দাবিয়া নিশ্চেষ্ট করিয়া রাখিতেন।