পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চৌদ্দ

 স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকল্পে ইউরোপে যাইবার জন্য সুভাষচন্দ্রকে মুক্তি দেওয়া হইলেও ভারতবর্ষের বাহিরে তাঁহাকে চলাফেরার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয় নাই। বিলাতের কমন্স সভায় এক প্রশ্নের উত্তরে স্যার স্যামুয়েল হোর জবাব দেন যে, সুভাষচন্দ্রকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হইবে না— তাঁহাকে জার্ম্মানী পরিদর্শনে অনুমতি দেওয়া হইবে না।

 ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে ৮ই মার্চ্চ সুভাষচন্দ্র ভিয়েনায় পৌঁছিয়া স্বাস্থ্যনিবাসে অবস্থান করেন। সেই সময় অষ্ট্রিয়া নামেমাত্র সাধারণতন্ত্র ছিল। কার্য্যতঃ অষ্ট্রিয়ার রাজনীতি ক্ষেত্রে ফ্যাসিষ্টদেরই প্রাধান্য ছিল। ভিয়েনা নগরী কিন্তু সোস্যাল ডেমোক্রাটদের দ্বারা শাসিত হইত। তাঁহাদের সুশাসনে একবৎসরের মধ্যেই ভিয়েনা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধিশালিনী ও সর্ব্বাপেক্ষা রমনীয়া নগরীতে পরিণত হইল। সেখানকার পৌরশাসনের সমাজতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা সুভাষচন্দ্রকে আকৃষ্ট করিল। সুভাষচন্দ্র সেখানকার মেয়ের কার্ল সিটজ (Karl Sietz) এর সহিত সাক্ষাৎ করেন এবং কলিকাতা ও ভিয়েনার শাসন ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করেন। ভিয়েনার পৌরশাসনে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা সুভাষচন্দ্রের অন্তরে এইরূপ গভীর রেখাপাত করিল যে তিনি উহা কলিকাতার শাসন ব্যবস্থায় প্রবর্ত্তন করিবেন সঙ্কল্প করিলেন। প্রবাসে থাকিয়াও ভারতবর্ষের উন্নতিই তাঁহার প্রধান চিন্তা ছিল।

 ভিয়েনাতে প্রবীণ রাজনীতিজ্ঞ পরলোকগত মিঃ বিটলভাই প্যাটেলের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হয়। মিঃ প্যাটেলও চিকিৎসার জন্য সেখানে অবস্থান করিতেছিলেন। সুভাষচন্দ্র ভগ্নস্বাস্থ্য লইয়াও মিঃ প্যাটেলের শুশ্রূষায় আত্মনিয়োগ করেন এবং মৃত্যু পর্য্যন্ত তাঁহার শয্যাপার্শ্বে ছিলেন।