পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

সুখসম্ভোগ ও প্রতিপত্তির প্রলোভন ত্যাগ করিয়া, স্ত্রী-পুত্র ও আত্মীয় পরিজনের স্নেহবন্ধন ছিন্ন করিয়া এই ভারত-সন্তান-দল জীবনপণে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছে—অতুলনীয় মনোবলে বলীয়ান হইয়া নিতান্ত অপ্রতুল সমরোপকরণ লইয়া সম্মুখসমরে দুর্ধর্ষ ও শক্তিমদমত্ত ব্রিটিশবাহিনীকে বিপর্য্যস্ত করিয়া বীরত্ব ও সামরিক প্রতিভার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিয়াছে। আপাতপরাজয়ের গ্লানি এই ফৌজকে স্পর্শ করিবে না। ভারতবাসী জানে কেবলমাত্র সার্থকতা ও সাফল্যের মাপকাঠিতে তাহাদের বিপ্লব-প্রচেষ্টার মহিমাকে মাপা যায় না—এই সার্থকজন্মা মুক্তিসাধকদল দেশবাসীর অন্তরে চিরদিন অমলিন মহিমামণ্ডিত হইয়া বিরাজ করিবে।

 পূর্ব্ব এশিয়ায় অস্থায়ী আজাদ-হিন্দ গভর্ণমেণ্টের প্রতিষ্ঠা ও আজাদ-হিন্দ-ফৌজের ভারত-অভিযান ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাসে সর্ব্বাপেক্ষা চাঞ্চল্যকর ও অসমসাহসিক ঘটনা। সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত বাহিনীর সহায়ে সম্মুখসংগ্রামে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করিবার এইরূপ চেষ্টা ভারতের ইতিহাসে আর হয় নাই। ১৮৫৭ সালের সিপাহীবিদ্রোহ সমগ্র দেশকে বিপ্লব-প্রচেষ্টায় উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল সত্য, কিন্তু সিপাহী-বিদ্রোহের পুরোভাগে কোন সবল, বিচক্ষণ, কুশলী ও সুসংহত রাষ্ট্রিক নেতৃত্ব ছিল না। আজাদ-হিন্দ ফৌজের ভারত-অভিযান ভারতবর্ষের অগণিত অধিবাসীর চিত্ততলে, ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করিয়াছে, তাহাতে এই সত্যই নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হয় যে, আপাতপরাজয় বরণ করিলেও এই ফৌজের উদ্দেশ্য বহুতর সিদ্ধিলাভ করিয়াছে— বিজিত হইয়াও এই বাহিনী প্রকৃত বিজয়লাভে সমর্থ হইয়াছে। আজ কোটি কোটি ভারতবাসী আজাদ-হিন্দফৌজের দুর্জ্জয় সংকল্প গ্রহণ করিয়া মাতৃভূমির স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগদান করিতে উন্মুখ। দেশের সর্ব্বত্র আজ যে ব্যাপক গণজাগরণ, ও রাজনৈতিক চেতনার সঞ্চার পরিলক্ষিত হইতেছে, আজাদ-হিন্দ-ফৌজেরই