পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী Ø¢ፃ মতিলাল—ভয় কব বে— এ আজ পাচ ছ' বছরের কথা । মতিলাল সান্তাল বাজিতপুরের ঘাটে বর্ষার নদীতে কুমীর বা কামটের হাতে প্রাণ হারান, তখন তার শিশুপুত্র একা নদীর ঘাটে কুলতলায় বসে ‘বাবা মতিলাল’ বলে কাদছিল, এ কথা অনেকেই জানেন বা শুনে থাকবেন । জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পর্য্যস্ত শুনে দেখতে এসেছিলেন জায়গাটা । কেউ কেউ খোকার ফোটো তুলি নিয়ে গিয়েছিল সেই ঘাটের সেই কুলতলায় তাকে আবার দাড় করিয়ে । তার পিতৃহারা প্রাণের আকুল কান্না বাইরে কতটুকু বা প্রকাশ হয়েছিল। তিনদিন পরে মতিলালের অর্ধভূক্ত দেহ পাওয়া যায় সর্ষেখালির বঁাকে মাছধরা কোমরজলে । পুলিসের হাতে দেওয়া হয় মৃতদেহ । খোকা আজ কোথায়, এ প্রশ্ন অনেকে করবেন জানি । টুকু নেই। এক বছর পরে সেও বাবার সন্ধানে অজানা পথে বেরিয়ে পড়ে। অন্নপূর্ণ আছেন। গায়ের লোকে দেখাশুনা করে, জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটের কলমের জোরে গবর্ণমেণ্ট মাসিক কিছু বৃত্তি দেয় । জাল ঘুরতে ঘুরতে কি-ভাবে আমি যে রামলাল ব্রাহ্মণের কাছে গিয়ে পড়েছিলাম, তা আমি এখনো বলতে পারি না । হাজারিবাগের জঙ্গলে ঘুরছিলাম, জীবিকা অর্জনের চেষ্টায় । সামান্য অবস্থার গৃহস্থের ছেলে, ম্যাট্রিক পাশ দিয়ে অর্থ উপার্জনের ব্যাপারে কত জায়গায় না গিয়েছি। কে যেন বলেছিল, হৰ্ত্ত কী আমলকী বয়রা চালান দিলে অনেক লাভ হয় তারই সন্ধানে ঘুরছি, রামগড় থেকে দামোদর নদ পার হয়ে—ক্রমোচ্চ মালভূমির অরণ্যসস্থল পথে পথে । --- জল খাবো । বেজায় তৃষ্ণ । সে পাহাড়ের আর বনের অপূৰ্ব্ব শোভার মধ্যে, বনজকুসুম-স্ববাস ভেসে আসতে পারে বাতাসে ; কিন্তু জলের সঙ্গে খোজ নেই। রাচির লাল মোটর-সার্ভিসের বাসগুলো মাঝে-মাঝে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো । এক-জায়গায় একটা বড় বাড়ী দেখলাম রাস্তা থেকে কিছুদূরে বনের মধ্যে । বিক্ষিত যে না হয়েছিলাম এমন নয়। এই পাওব-বর্জিত দেশে অন্তত দুলক্ষ টাকা খরচ করে বাড়ী করলে কে ? তার আবার মস্ত-বড় তোরণ, সঁাচীভূপের তোরণের অনুকরণে। তার ওপরে হিন্দীতে লেখা—“ভরহেচ, নগর’ । সে কি ব্যাপার ? নগর কোথায় এখানে ? একখানা তো বড় বাড়ী ঐ অদূরে শোভা পাচ্ছে। যাক গে। আমার তৃষ্ণার জল এক ঘটি পেলেই মিটে গেল।