কুশল পাহাড়ী WS-ID
আমার আপত্তির পেছনে যে খুব জোর ছিল, তাও নয়। ওরা হাতে চাপড়ে মোটা মোট চাপাটি তৈরী করলে এবং একটা মাটির ভীড়ে কাঠ-কয়লার টিমে আঁচে অড়রের ভাল চাপিয়ে দিলে। আধ-ঘণ্টা পরে রান্না নামিয়ে আমায় দুখান৷ চাপাটি এবং সেই চাপাটিরই ওপর খানিকট অড়রের ডাল ঢেলে দিয়ে বল্পে, খ লিজিয়ে ।
ওদের মধ্যে একজন বল্পে, জুঠা মাৎ কিজিয়ে, ঠাহরিয়ে থোড়া। এক গো নিমকি লিজিয়ে ।
নিম্কি অর্থাৎ একখণ্ড লেবুর আচার আমার চাপাটির এককোণে ফেলে দিলে ওপর থেকে, পাছে এটো করে থাকি এই ভয়ে ।
সবাই একসঙ্গে ভোজন আরম্ভ করা গেল । ওদের ভদ্রতায় মুগ্ধ হলাম। কোথাকার কে তার ঠিক নেই, জাত নয়, জ্ঞাতি নয়, আমার জন্যে কি মাথাব্যথা ? মানুষের মধ্যেই দেবতা বাস করেন, এ সেদিনও বুঝলাম, এর আগে কাশীতে নিঃসম্বল অবস্থাতেও কয়েকবার বুঝেছিলাম ।
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে ওদের মধ্যে একজন বল্লে, বাবুজি, আপ যায়গা হামলোককে
স{থ ?
—কোথায় যাবো ?
—জিলা চম্পারন, থানা রামনগর, গাও মনিয়ারি ।
—সেখানে গিয়ে কি করবো ?
—তোমাকে আমরা থাকতে দেবো, খেতে দেবো, তুমি বাঙালী বাৰু, আমাদের ছেলেদের ইংরিজি পড়াবে ।
—বেশ, যাবো । মনে ভাবলুম আমার আবার কি, যেখানে ভাত জোটে সেইখানেই আমার বাড়ীঘর ।
ওদের গাড়ী এল, আবার কাশীর দিকে যেতে হল। কাশী থেকে গোরখপুর, সেখান থেকে খেয়ায় গণ্ডকী নদী পার হয়ে ও-টি রেলওয়ের গাড়ীতে উঠে পরদিন রাত ন’টায় মামলাম নারকাটিয়াগঞ্জ । সেখান থেকে আবার ব্রাঞ্চ লাইন গেল রামনগর। রামনগর থেকে ইটে-পথে ওদের গ্রাম মনিয়ারি প্রায় বারো মাইল, মধ্যে সেচ বিভাগের খাল পার হতে
হয় দু’বার । 豪
দিন-তিনেক লাগলো সবস্থদ্ধ । কিন্তু এখানে এসে বেশ লাগলো। বড় স্বন্দর জায়গা। আমি যখন ওদের গ্রামে পৌঁছেচি, তখন বেল তিনটে । দূরে একটা সাদামত জিনিস পাহাড়ের মাথায় দেখা যাচ্ছিল অনেকক্ষণ থেকে । আমি মনিয়ারি ক্যানাল পার হবার সময় থেকে পর্য্যস্ত চেয়ে দেখচি |
বল্লাম, কি ওটা ?
ওট বল্পে, বফৰ্ণ। ও হিমালয় গিরি না হয় ? হিমালয়মে যে বফ গিরতা হ্যায়—
ঐ বরফাবৃত হিমালয়ের দৃপ্ত ? কখনো দেখি নি। অমন দেখায় নাকি ? কি অদ্ভুত!
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪০৯
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
