8९8 বিভূতি-রচনাবলী
—টেরি ভাঙে আমার সামনে ? মুখ বুজে চলে যাও আস্তে আস্তে। কখনো আর আমন না দেখি । R
শু্যামাচরণের ধীরে ধীরে প্রস্থান ।
একবার গ্রামের বৃদ্ধ প্রসন্ন রায়ের কাছ থেকে হৃদয় ঘোষের ছেলে বাবুরাম দুটাকার বঁাশ কেনে। প্রসন্ন রায়ের অবস্থা খুব খারাপ, তার ওপর তিনি চোখে ভালো দেখেন না । বঁাশের টাকার জন্তে বাবুরামের বাড়ী হেঁটে প্রসন্ন রায়ের পায়ে ব্যথা হয়ে গেল, তবুও টাকা আদায় করা গেল না। আজ বলে কাল দেবো, কাল বলে শনিবার দেবো। দুমাস এভাবে কাটাবার পরে একদিন প্রসন্ন রায় লাঠি ধরে অতি কষ্টে তার বাড়ী গিয়ে তাগাদ করতেই বাবুরাম রেগে উঠে বুঝি বলেছিল—যান যান ঠাকুর, অত তাগাদা কেন ? দুটাকার বঁাশ নিয়ে মুই তো আর পেলিয়ে যাই নি । মোর যখন হাতে হবে তখন ট্যাক দেবো। যান আপনি—
এর উত্তরে প্রসন্ন রায় দু এক কথা কি বলে থাকবেন।
তখন সে প্রায় মারে আর কি প্রসন্ন রায়কে । চেচিয়ে উঠে বলে—যাও ঠাকুর, তোমার এক পয়সা ধারিনে ! কি করবে করগে যাও ।
প্রসন্ন রায় এসে হরি রায়ের দরবারে অভিযোগ জানালেন । হরিকাকা অঘোর মুচিকে হুকুম দিলেন—ধরে নিয়ে এসে তো ব্যাটাকে । দেখি ওর কতদূর প্রতাপ হয়েচে ।
অঘোর মুচি বিখ্যাত লাঠিয়াল, সে হুকুম পেয়ে ঘাড় ধরে নিয়ে এল বাবুরাম ঘোষকে । হরিকাকা বল্পেন—তুমি প্রসন্নদার রাশের টাকা ধারো ?
বাবুরাম তখন ভয়ে ঠকৃঠক করে কঁপিচে । সে বল্লে, আজ্ঞে ঠ্যা বাৰু ।
—তবে দাও নি কেন ?
—আজ্ঞে হাতে নেই।
—তবে গরিব ব্রাহ্মণের বঁাশ কিনতে গিয়েছিলে কেন ?
—আজ্ঞে ভূল হয়ে গিয়েচে ।
—ও সব বাজে কথা ছাড়ো। আজ তুমি ওঁকে যা তা বলেচো কেন ? বড্ড নবাব হয়ে গিয়েচো নাকি ? কানমলা থাও ।
তখুনি বাবুরাম কানমলা খেলে বিনা প্রতিবাদে ।
—আচ্ছা যাও, এই দুটাক আমি এখুনি দিয়ে দিচ্চি। তুমি আমাকে কাল সন্দের মধ্যে যেখান থেকে পারো টাকা দিয়ে যাবে। যাও চলে যাও ।
এই রকম ছিল হরিকাকার বিচার ।
গ্রামের বিপদে আপদে হরিকাকা সকলের আশ্রয়স্থল ছিলেন। পরপীড়নে যেমন দক্ষ, পরোপকারেও তেমনি অগ্রণী। গায়ে শক্তি ছিল অসাধারণ। চামটার বিল করার সময় জমিদারের পক্ষ হয়ে নিজে লাঠি ধরে প্রতিপক্ষ মুসলমানদের হটিয়ে দিয়েছিলেন শোনা যায়। মুসলমানরাও খুব মানতে হরিকাকাকে । তাদের পারিবারিক বিবাদে হৰিকাক লালিপি
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৪৪
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
