পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী ৪২৭ —ভালোই হয়েচে তে রাঙাদিদির মিথ্যে কান্না । —কি হয়েচে ? –সন্নিসি হয়ে গিয়েচে । —কোথায় ? —ত কে জানে। সন্ধান নেই । —সে কি ! —অনেক সন্ধান করা হয়েচে । কেউ কিছু জানে না । —হরিকাকা সমিসি হয়েচে, একদম নিরুদেশ, কদিনের কথা এসব ? —মাস দুই হল একদম নিরুদ্দেশ । —তার আগে কোথায় ছিলেন ? —নিবান্ধীর সেই ভৈরবীর নাম শুনে গিয়েছিলি ? —মনে হচ্চে কথাটা । —সেই ভৈরবীর ওখানে পড়ে থাকতে । —ভৈরবী কোথায় ? —নিবান্ধার মন্দিরেই আছে। কালও আমাদের পাড়া দিয়ে ভিক্ষে করে গেল । রূপে গী আলো করে গেল একেবারে । হরি ঠাকুরপো ভৈরবীর কাছে মন্ত্র নিয়ে না কি নিয়ে ভগবান জানেন, একদম উধাও। রাঙাদিদি কেঁদে কেঁদে খুন—একটা কথাও বলে যায় নি বেচারীকে । একে ছেলেপুলে নেই, কি বিপদে যে পড়েচে । না, কেউ কোনো অপবাদ রটাতে পারে নি হরিককার নামে, গায়ে সকলের মুখেই এক কথা । ধন্য ভৈরবীর ক্ষমতা ! এমন লোকের এমন অদ্ভুত পরিবর্তন বুড়ে বয়সে। সারা জীবন মদ-ভাং খেয়ে । সুন্দরী ভৈরবী তো এখানেই রয়েচে । কারো কিছু বলবার উপায় কি ? ধন্য ধন্য করচে সবাই এবং আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, রাঙা খুড়ীমার ওপর কারো তেমন সহানুভূতি নেই। বেশ তো, একটা অসৎ লোকের যদি সৎপথে পা দেবার প্রবৃত্তি হয়ে থাকে, তাতে রাঙাদিদি দুঃখ না করে বরং আহ্নাদ করুন—ভাবটা এই রকম সাধারণের মনের। ক্রমে ক্রমে সব শুনলাম ঘটনাটা । তবে একটা কথা, এই সব ঘটনার পক্ষে সাক্ষী কেউ ছিল না । ভৈরবীর সঙ্গে হরিকাকারু সাক্ষাৎকারের ইতিহাস চিরকাল লুপ্ত থেকে যেতে, যদি না সেখানে আরামডাঙার মধু হাড়ি উপস্থিত থাকতো। জনকয়েক লোক সব সময়েই ভৈরবীর ওখানে জুটতে গাজা খাওয়ার লোভে । প্রথম দর্শনের ঘটনাটা এই রকম ঘটে— ভৈরবী জিজ্ঞাস্থ দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলে হরিকাকার দিকে। হরিকাক খানিকটা অবাক হয়ে চেয়ে ছিলেন ভৈরবীর দিকে। মুখে খানিকক্ষণ কথা ছিল না । ভৈরবী বল্পে—কোথা থেকে আসা হচ্চে ?