পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী را برای : সেই খাট নিয়ে বাড়ি ফিরতে সতীশের প্রায় দশটা বাজল । যে দেখল সে-ই বল্ল— চমৎকার! সেখানে থেকে খাওয়া-দাওয়া করে আমি বাড়ি গেলাম। সতীশ বল্ল—আবার এস, নেমস্তন্ন রইল । —তথাস্তু। বলে চলে এলাম । আমি যাবার আগেই পরের দিন সকালে সতীশ এসে হাজির । উস্কপুষ্ক চুল, মুখ শুকনো। চোখ দুটি জবাফুলের মত লাল—দুর্ভাবনায় ও দুশ্চিন্তায় হয়তে সারারাত্রি ঘুম হয়নি । আমি সবিস্ময়ে প্রশ্ন করতাম—আরে, ব্যাপার কি ? —বিপদ, বিষম বিপদ ! সতীশের গলা দিয়ে স্বর বার হচ্ছিল না । —কিসের বিপদ ? —সেই খাট ! - একটা যে কিছু হবে, তা আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম। কেউ কখনও খাল কেটে কুমীর নিয়ে আসে ? হাজার হোক, ওটা একটা রহস্যজনক খাট । পূৰ্ব্বরাত্রের ঘটনা সে সবিস্তারে বর্ণনা করে গেল। সারারাত্রি সে ঘুমোতে পারেনি। ঐ খাটের ওপর সে শুয়ে ছিল । হঠাৎ মধ্যরাত্রে তার মনে হোল, কে যেন খাটটা নাড়াচ্ছে! উঠে সুইচ টিপে আলো জেলে দেখল, না, খাট ঠিকই আছে। আবার শুয়ে পড়ল—আর খানিক পরেই ঘুম ভেঙে গেল। কিসের একটা ভীষণ শব্দে সারা ঘরখানা যেন গমগম করছে! দেওয়ালের সঙ্গে যেন খাটখানার ভীষণ ঠোকাঠুকি হচ্ছে । ধড়মড় করে উঠে ও আলো জালল। না, সব কিছু নি:শব্দ নিথর—কোথাও এতটুকু শব্দ নাই। সে আবার শুয়ে পড়ল । এবার আর সে আলো নেবাল না। ভেরিরাত্রে কার দুৰ্ব্বোধ্য আৰ্ত্তকণ্ঠের বিলাপধ্বনিতে তার চেতনা ফিরে এল । কে যেন খাটের পাশে বসে বিনিয়ে-বিনিয়ে কেঁদে মরছিল । আমি বল্লাম—বলেছিলাম তো তোমায় প্রথমেই, ও খাট কিনে কাজ নেই। যেমন তোমার রোথ । এইবার বোঝে । সতীশ বল্ল—দেখ খগেন, তোমায় হয়তো বুঝিয়ে বলতে পারব না। ঐ হতভাগা খাটখানার ওপর এমন মায়া লেগে গেছে যে কি বলব ! আমি ওকে ছাড়তে পারব না কোনমতেই । —তবে মর ঐ খাট নিয়ে । —আমি তোমার সাহায্য চাই । —আমার সাহায্য ! —হ্য, আজ তুমি আমাদের ওখানে রাতে খাওয়া-দাওয়া করবে। সারারাত না ঘুমিয়ে ঐ খাট পাহারা দেব। দেখি, ওর গলদ কোথায় ! —আর আমার আপিস ? —পাগল, কাল যে রবিবার ! * অগত্যা বন্ধুকে সাহায্য করখার জন্তে সন্ধ্যাবেলা তাদের বাড়ি গিয়ে হাজির হলাম । সতীশ আমার অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে ছিল । সে সোল্লাসে চীৎকার করে উঠল—সুস্বাগতম! মুস্বাগতমূ! —তারপর ? আর কোন গণ্ডগোল হয়নি তো ? —ন, দিনের বেল গণ্ডগোল হবার তো কোন কারণ নেই!