পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○〉W。 বিভূতি রচনাবলী ওই কাজই করে । - &b. একটু পরে কলকাতার ট্রেন এল—আমি সারা পথ কেবল ভাবছিলুম এই ক'দিনের কথা, আজ সারাদিনের কথা। খুকু কতবার এল, সেকথা কেবলই শুক্রতারার দিকে চেয়ে ভাবি, ওখানেও কি এমন বনশ্বাম পল্লী আছে, তার ধারে ছোট গ্রাম্য নদী বয়ে যাচ্ছে, কত মাধবী রাত্রে, কত বর্ষামুখর আষাঢ় প্রভাতে, কত বসন্তের দিনে গাছে গাছে প্রথম মুকুল আবিভূত হবার সময়ে, ওদের দেশেও চোথে চোথে লোকে কত কথা বলে, কত স্নিগ্ধ মধুর ভাব ও বাণীর বিনিময় ! শুক্রতার নাকি শুধুই বরফের দেশ, সাত হাজার ফুট উচু হয়ে গ্লেসিয়ার বরকের স্তর জমে আছে গ্রহের ওপরে। ভাবতে ভারতে ট্রেন এসে দাড়ল দমদম গোরাবাজারে । অপূৰ্ব্ব সরস্বতী পূজার ছুটি শেষ হল । অনেকদিন মনে থাকবে এদিনগুলোর কথা । সেদিন চন্দননগরে গিয়েছিলুম সাহিত্য-সম্মেলনে। এখান থেকে মোটরে সজনীদের সঙ্গে গেলুম। উত্তরপাড়, বালি, কোন্নগর প্রভৃতি শহরের মধ্যে দিয়ে—গঙ্গার ধার দিয়ে দিয়ে পথ । অনেকদিন এপথে যাওয়া হয়নি, সেই অনেকদিন আগে একবার শ্রীরামপুরে গিয়েছিলুম মোটরবাসে এপথে । সভামণ্ডপে অনেকের সঙ্গে দেথা হল, নীহার রায় বিলাত থেকে ফিরেচে। মুণীতিবাবু বল্লেন, সেদিন কনভোকেশনের দিন আপনি কোথায় গেলেন ? আপনাকে খুজিলুম, আর দেখা পেলাম না । প্রেসিডেন্সি কলেজের গেটটার কাছে কনভোকেশনের দিন মুনীতিবাবুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তারপর আমি তাকে হারিয়ে ফেললুম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যসভার উদ্বোধন করেই চলে গেলেন। আমি গেলুম আহার করতে। তারপর রবীন্দ্রনাথের বোটে র্তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখি অমল হোম, নীহার রায় সেখানে বসে। বাগান সম্বন্ধে অনেকক্ষণ কথাবাৰ্ত্ত হল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মুনীতিবাবুর। সার যদুনাথ সরকার এলেন বিকেলের দিকে । রবীন্দ্রনাথের বোটটা বড় চমৎকার । মেঘ করেচে আকাশে । ও-পারের মেঘে-ভর আকাশট। বেশ দেখা যাচ্ছিল। অনেক দূরের একটা গ্রাম এই সান্ধ্য আকাশের তলায় কেমন দেখাচ্ছে ! ওখান থেকে আমরা মতিলাল রায়ের প্রবর্তক সঙ্ঘে গেলুম। ফাদার দোতেন আমাদের সঙ্গে মিশল এসে সজনীদের গাড়িতে। ফাদার দোতেন জনৈক পদ্রী, কেমন বাংলা জানে! সন্ধ্যার পরে আমরা আবার বালি, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ার মধ্যে দিয়ে কলকাতায় ফিরি। আজ মাঘীপূর্ণিমা। টালিগঞ্জের খাল পার হয়ে সেই যে সুশীলেশ্বরী আশ্রমে আর বছর গিয়েছিলুম, এবারও সেখানে গেলুম। গাছে গাছে আমের বউল হয়েচে, ঘেটুফুল ফুটেচে জামতলায়, বাতাবীলেবু ফুলের গন্ধ পথে, কোকিল ডাকচে । আর বছরের সেই ইন্দুদিদি আছেন, তিনি ঘরের মধ্যে বসিয়ে বাড়ির ছেলের মত যত্ন করে, খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ালেন। বহু মেয়ের ভিড় । কলকাতার উপকণ্ঠে এই নিভৃত পাড়াগায়ের দেবালয়টি আমার বেশ লাগল। বসন্তের প্রথম দিনগুলিতে আকাশ খররৌদ্র, নতুন ফোটা ফুলের দল মনে কি একটা অপূৰ্ব্ব আনন্দ দেবার আশ দেয়, বিশেষ করে এই নীল আকাশ ! সেদিন দুপুরে খয়রামারির মাঠে একা বসে বসে বসস্ত-দুপুরের নীল আকাশ আর খররৌদ্র ভোগ করছিলুম। মাঠের মধ্যে ফুল ফোট শিমুলগাছগুলো সমস্ত পটভূমিকে এমন একট। শ্ৰী দান করে, তা আর কোনু গাছ পারে ন, খানিকট পারে শীতকালের ছোট এড়াঞ্চির ফুল । আমার মনে হয় ওরা গ্রাম্য প্রকৃতির ঘরোয়া ভাবটা কাটিয়ে বৃহত্তর পৃথিবীর বৃহত্তর ভূমিত্রর প্রকৃতির সঙ্গে ওকে এক করিয়ে দেয়