পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ල উঠিয়ে দিতে পারে--- ' ( "তৃণাকুর", পৃ. ৪) । রবীন্দ্রনাথের কথার প্রতিধ্বনি শনি এর মধ্যে । হয়ত তাই-ই । শাশ্বত আনন্দ-জীবন' হয়ত তত্ত্বরপেই প্রথমে বিভুতিভূষণের কাছে প্রতিভাত হয়েছিল । কিন্তু যখন তাঁর নিজের মুখে শনি—‘সন্ধ্যা হয়ে গেল, আমি । ছাদে নীরব সান্ধ্য আকাশের তলে প্রতিদিনের মত পায়চারী কতে লাগলাম—মনে এক অতীন্দ্রিয় আনন্দবোধ, সে আনন্দের তুলনা হয় না—ভেবে দেখলাম এই আনন্দেই জীবনের সাথ"কতা । কিসে থেকে তা আসে সে কথা বিচারে কোনো সাথ“কত নেই আদেী,— আনন্দ যে এসেচে, সেইটাই বড় কথা ও পরম সত্য।’ (‘তৃণাকুর", পৃ. ৫১ ) । তখন বুঝি, দশনের পরিভাষায় যে-তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেওয়া চলে, উপনিষদের মশের যে তত্ত্বের সমথনি মেলে তা বিভূতিভূষণের চিত্তে অনিবাঁচনীয় উপলব্ধি । এ-উপলব্ধির বৃদ্ধিগম্য অথ' নেই, সত্যমিথ্যা বিচার নেই । ‘আমার সে কল্পনা সত্য কি মিথ্যা সে বিচারের কোনো প্রয়োজন নেই, আমার দটিতে আমি যা দেখোঁচ, আমার কাছে সেটা মহাসত্য—revelation, চিন্তা ও কল্পনার আলোকে যা দেখা যায়—তাকে আমি মিথ্যা বলে ভাবতে পারি না।’ (‘তৃণাকুর” প. ৩৩)। চেতনার পটে স্বতঃস্ফতভাবে এ-উপলব্ধি উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে—‘আসল আনন্দকে জোর করে মনকে বুঝিয়ে, তক করে আনতে হয় না—সে সহজ অথাৎ Spontaneous ( 'তৃণাকুর', পৃ. ৫২) । বিভুতিভূষণের চিত্তে ক্ষণে ক্ষণে আনন্দময় ভাবলোকের বাতা এসে পৌছালেও তিনি অরপে জগতের mystic কবি নন। বাস্তব লোকের সুখ-দুঃখের হাসি-কান্নার জগৎ প্রবল শক্তিতে তাঁকে আকষণ করেছে। তাঁর ভাবলোক বাস্তবলোককে অঙ্গীকার করে, বাস্তবলোককে অগ্রাহ্য করে, সে ভাবলোক অস্তিত্বহশন। তাই সেই স্তব্ধ চিন্ময় ভাবলোক যাঁর সম্প্রধান মেলে নদীতীরে নেমে আসা অপরাহ্লের নিজানতায়, বনের ঝোপে ফোটা বনকলমী ফুলের উদাস শোভায়, অধিার নিশীথে মাথার উপরকার জলজৰলে নক্ষত্র ছিটানো ছায়াপথের বিরাট ইঙ্গিতে। যে জীবন-রহস্যের মলে উধাকাশে, শাখা-প্রশাখা ধরণীর ধর্মলিতলে । ( অরণ্য মম'র', পৃ. ২৩) । | 8 || ধরণীর বাস্তবলোক এবং চিন্ময় ভাবলোকের সম্মিলনে বিভুতিভূষণের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক রচনাবলীর সন্টি। বিভুতিভূষণের সাথকতম সটি অপর অধোঁক বাস্তবলোকের, অধোক ভাবলোকের। বাড়ীর দালানের জানালা থেকে দেখা অশ্বখ গাছের মাথা, উদার নীল রঙের আকাশ, নীলদের তালগাছের মাথা, দর আকাশের গায়ে উডীয়মান চিল, শৈশবেই অপর মনে ভাবলোকের আবরণ উন্মোচন করে দিয়েছিল। শিশ অপর ভাবলোক বহুলাংশে স্বপ্নলোক। রহস্যময় প্রকৃতি, অনতিক্ৰমণীয় দুরত্ব, অপরিচিতের আকষণ ওবিস্ময় দিয়ে গড়া যে স্বপ্নলোক-অপর কাছে তা নিশ্চিন্দিপুরের মত সত্য, হয়ত অধিক সত্য। কিন্তু প্রকৃতির সাহচযে এক আনন্দময় অনুভুতির পন্দন শৈশবেই অপর অনুভব করেছিল। ‘বষাসতেজ, ঘন সবুজ ঝোপের মাথায় নাটা-কাঁটার স্যগন্ধ ফুলের হলদে রংএর শীষ, আসন্ন সযাস্তের ছায়ায় ছোট ময়না-কটিা ডালের আগায় কাঠবিড়ালীর লঘগতি আসা যাওয়া, পত্রপাপফলের সে প্রাচুর্য, সবাকার অপেক্ষা যখন ঘনবনের প্রাস্তবতী, ঝোপঝাপের সঙ্গীহীন বাঁকা ডালে বনের কোলে অজানা পাখী বসিয়া থাকে, তখন তাহার মনের বিচিত্র, অপব, গভীর আনন্দরসের বণনা সে মুখে বলিয়া কাহাকেও বাবাইতে পারে না।’ (‘পথের পাঁচালী, পৃ. ১৩৮ ) । ‘অপরাজিত'-এর অপও বিভুতিভূষণের মত বিশ্বাস করে, যেজীবন যে-জগৎকে আমরা প্রতিদিনের কাজকমে হাটে-ঘাটে হাতের কাছে পাইতেছি জীবন