পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত צסא এক খণ্ড ছাপা কাগজ সে দেবব্রতকে দেখিতে দিল । বড় বড় অক্ষরে কাগজখানাতে লেখা আছে—Literature. এত বড় কথা লে এ পর্যন্ত কমই পাইয়াছে, অর্থটা জানিবার খুব কৌতুহল। দেবব্রত জানে না, বলিল, চলুন, খাওয়ার সময় মণিদাকে জিজ্ঞেস করবো। মণিমোহন সেকেণ্ড ক্লাসের ছাত্র, দেবব্রত কাগজখানা দেখাইলে সে বলিল, এর মানে সাহিত্য। এ ম্যাকৃমিলান কোম্পানীর বইয়ের বিজ্ঞাপন, কোথায় পেলে ? অপু হাত তুলিয়া দেখাইয়া বলিল, ওই লাইব্রেরীর কোণটায় কুড়িয়ে পেয়েছি, লাইব্রেরীর ভেতর থেকে কেমন ক’রে উড়ে এসেছে বোধ হয়। কাগজখানার আস্ত্ৰাণ লইয়া হাসিমুখে বলিল, কেমন ন্যাপথালিনের গন্ধটা ! কাগজখানা সে যত্ন করিয়া রাখিয়া দিল । হেডমাস্টারকে অপু অত্যন্ত ভয় করে। প্রৌঢ় বয়স, বেশ লম্বা, মুখে কাচাপাকা দাড়িগোফ—অনেকটা যাত্রার দলের মুনির মত। ভারী নাকি কড়া মেজাজের লোক, শিক্ষকের পর্যন্ত তাহকে ভয় করিয়া চলেন। অপু এতদিন তাহাকে দূর হইতে দেখিয়া আসিতেছিল। একদিন একটা বড় মজা হইল। সত্যেনবাবু ক্লাসে আসিয়া বাংলা হইতে ইংরেজী করিতে দিয়াছেন, এমন সময় হেডমাস্টার ক্লাসে ঢুকিতেই সকলে উঠিয়া দাড়াইল। হেডমাস্টার বইখানা সত্যেনবাবুর হাত হইতে লইয়া একবার চোখ বুলাইয়া দেখিয়া লইয়া গভীরস্বরে বলিলেন— আচ্ছ, এই যে এতে ভিক্টর হিউগো কথাটা লেখা আছে, ভিক্টর হিউগো কে ছিলেন জানো ? ক্লাস—নীরব। এ নাম কেহ জানে না। পাড়াগায়ের স্কুলের ফোর্থ ক্লাসের ছেলে, কেহ নামও শোনে নাই – —কে বলতে পারে—তুমি—তুমি ? ক্লাসে স্বচ পড়িলে তাহার শব্দ শোনা যায়। অপুর অস্পষ্ট মনে হইল নামটা-যেন তাহার নিতান্ত অপরিচিত নয়, কোথাও যেন সে পাইয়াছে ইহার আগে। কিন্তু তাহার পালা আসিল ও চলিয়া গেল, তাহার মনে পড়িল না। ওদিকের বেঞ্চিটা ঘুরিয়া যখন প্রশ্নটা তাহাদের সম্মুখের বেঞ্চের ছেলেদের কাছে আসিয়া পৌঁছিয়াছে, তখন তাহার হঠাৎ মনে পড়িল, নিশ্চিন্ধিপুরে থাকিতে সেই পুরাতন বঙ্গবাসী গুলার মধ্যে কোথায় সে এ-কথাটা পড়িয়াছে—বোধ হয়, সেই ‘বিলাত যাত্রীর চিঠি’র মধ্যে হইবে। তাহার মনে পড়িয়াছে । পরক্ষণেই সে উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল—ফরাসী দেশের লেখক, খুব বড় লেখক। প্যারিসে তার পাথরের মূর্তি আছে, পথের ধারে। হেডমাস্টার বোধ হয় এ ক্লাসের ছেলের নিকট এ ভাবের উত্তর আশা করেন নাই, তাহার দিকে চশমা-আঁটা জলজলে চোখে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিতেই অপু অভিভূত ও সঙ্কুচিত অবস্থায় চোখ নামাইয়া লইল । হেডমাস্টার বলিলেন, আচ্ছা, বেশ। পথের ধারে নয়, বাগানের মধ্যে মূর্তিটা আছে—বসো ; বসে সব। সত্যেনবাবু তাহার উপর খুব সন্তুষ্ট হইলেন। ছুটির পর তাহাকে সঙ্গে করিয়া নিজের বাসায় লইয়া গেলেন। ছোটোখাটো বাড়ি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, একাই থাকেন। স্টোও