পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক JX দল প্রাণভরে দৌড়িতেছে, শিয়াল দোঁডিতেছে, কান উচু করির খরগোস দৌড়িতেছে, একদল বন্তপূকর তো ছানাপোনা লইয়া কাছারির উঠান দিয়াই দিগ বিদিক জ্ঞানশূন্ত অবস্থায় চুটিয়া গেল—ও অঞ্চলের বাথান হইতে পোষ মহিষের দল ছাড়া পাইয়া প্রাণপণে ছুটিতেছে,একবীক বনটির মাথার উপর দিয়া সে করিয়া উডিয়া পলাইল, পিছনে পিছনে একটা বড় বীক লাল স্থাস। আবার এক বৰ্ণক বনটিয়া, গোটাকতক সিল্লি । রামবিরিজ সিং চাকলাদার অবাক হইয়া বলিল—পানি কাঙ্গ নেই ছে...আরে এ লাল ইসকা জেরা কাহাসে আয়', ভাই রামলগন ? গোষ্ঠ মুহুরী বিরক্ত হইয়া বলিল—আ: বাপু রাথ। এখন প্রাণ নিয়ে টানাটানি, লাল হাস কোথা থেকে এল তার কৈফিয়তে কি দরকার ? 編 আগুন বিশ মিনিটের মধ্যে আসিয়া পড়িল । তার পরে দশ-পনের জন লোক মিলিয়া প্রায় ঘণ্টাখানেক আগুনের সঙ্গে সে কি যুদ্ধ! জল কোথাও নাই—অধিকাচ গাছের ডাল ও বালি এইমাত্র অস্ত্র। সকলের মুখচোখ আগুনের ও রৌদ্রের তাপে দৈত্যের মত বিভীষণ হইয়া উঠিয়াছে, সৰ্ব্বাঙ্গে ছাই ও কালি, হাতের শিরা ফুলিয়া উঠিয়াছে, অনেকেরই গায়ে হাতে ফোস্কা—এদিকে কাছারির সব জিনিসপত্র, বাক্স, খাট, দেরাজ, আলমারি তখনও টানাটানি করিয়া বাহির করিয়া বিশৃঙ্খলভাবে উঠানে ফেলা হইতেছে। কোথাকার জিনিস যে কোথায় গেল, কে তার ঠিকানা রাখে ! মুহুরীবাবুকে বলিলাম—কাশ আপনার জিন্মায় রাখুন, আর দলিলের বাক্সট । কাছারির উঠান ও পরিষ্কৃত স্থানে বাধা পাইয়া আগুনের স্রোত উত্তর ও দক্ষিণ বাহিয়া নিমেষের মধ্যে পূৰ্ব্বমুখে ছুটিল—কাছারিটা কোনক্রমে রক্ষা পাইয়া গেল এযাত্রা। জিনিসপত্র আবার ঘরে তোলা হইল, কিন্তু বহু দূরে পূর্বকাশ লাল করিয়া লোলজিহা প্রলয়ঙ্করী অগ্নিশিখা সারা রাত্রি ধরিয়! জলিতে জলিতে সকালের দিকে মোহনপুরা রিজার্ত-ফরেস্টের সীমানায় গিয়া পৌছিল। দু-তিন দিন পরে খবর পাওয়া গেল - রো ও কুশী নদীর তীরবর্তী কৰ্দমে আট-দশটা বস্ত মহিষ দুটি চিতা বাঘ, কয়েকটা নীলগাই হাবড়ে পড়িয়া পুতিয়া রহিয়াছে। ইহারা আগুন দেখিয়া মোহনপুর জঙ্গল হইতে প্রাণভয়ে নদীর ধার দিয়া ছুটিতে ছুটিতে হাবডে পড়িয়া গিয়াছে —যদিও রিজার্ভ ফরেস্ট হইতে কুশী ও কারো নদী প্রায় আট-ন মাইল দূরে। চতুর্থ পরিচ্ছেদ > বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ কাটিয়া গিয়া আষাঢ় পড়িল । আষাঢ় মাসে প্রথমেই কাছারির পুণ্যাহ উৎসব। এ জায়গার মানুষের মুখ বড় একটা দেখিতে পাই না বলিয়া আমার একটা শখ ছিল কাছারির পুণ্যাহের দিনে অনেক লোক নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইব । নিকটে কোন গ্রাম না থাকায়