পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭e বিভূতি-রচনাবলী —বেরিয়ে পড়বো কাক, তবে সে দিকে নয়। আমি ডাক্তারি করবো ভেবে রেখেচি অনেক দিন। ওই সোনাতনপুর, কামার গী, পিপলিপাড়া এ সব অঞ্চলে ভাক্তার নেই। কে বাবে ওসব অজ পাড়াগায়ে মরতে ? আমি সোনাতনপুরে বসবো ভেবেচি। সোনাতনপুরের রামনিধি দত্ত ওখানকার মধ্যে একজন বিশিষ্ট লোক, সেখানে গিয়ে বাবারপরিচয় দিয়ে ওই গায়েই বসবো। দেখি কি হয়। জমিদারী শাসন আর প্রজা ঠ্যাঙানো, ও আর করচি নে কাকা। বলাই মারা যাওয়ার পর আমি বুঝতে পেরেচি ও কাজে স্থখ নেই। আর আমি ওপথে— কৃষ্ণলাল অবাক হইয়। বলিলেন, ডাক্তারি করবে ! ডাক্তারি শিখলে কোথায় তুমি যে ডাক্তারি করবে ! স্বত বদখেয়াল কি তোমার মাথায় আসে । —ভাক্তারি অামি করেচি এর আগেও । ধোপাখালির কাছারিতে বসে। আর শেখার কথা বলচেন, কেন বই পড়ে বুঝি শেখা যায় না? জমিদার বাবুর মেয়ে আমাকে কতকগুলো ডাক্তারি বই দিয়েছিল, তাই পড়ে শিখেচি। সেই আমায় ডাক্তারি করতে পরামর্শ দেয়, কাকা। বলেছিল, তার এক দেওর বীজপুরে ডাক্তারি করে, তার কাছে গিয়ে শেখার ব্যবস্থা করে দেবে-ও-ই বলেছিল। বেশ চমৎকার মেয়ে, মনটিও খুব ভাল, আমায় বলেছিল – হঠাৎ বিপিন দেখিল মানীর কথা একবার আসিয়া পড়িয়াছে যখন, তখন ওর কথাই বলিবার ঝোক তাহাকে পাইয়া বসিয়াছে। ডাক্তারির কথা গৌণ, মূখ্য কাজ মানীর সম্বন্ধে কথা বল। কৃষ্ণকাকার সামনে! বিপিন চুপ করিল। কৃষ্ণলাল বলিলেন, জমিদার বাবুর মেয়ে ? বিয়ে হয়েছে ? তোমার সঙ্গে কি ভাবে আলাপ ? আঞ্জে হ্যা, পিয়ে হয়েছে বৈকি ! বাইশ তেইশ বছর বয়েস। আমার সঙ্গে তো ছেলেবেলা থেকেই আলাপ ছিল কি না ! বাবার সঙ্গে ওদের বাড়ী ছেলেবেলায় ধেতাম, তখন থেকেই আলাপ । একসঙ্গে খেলা করেচি। এখনও আমাকে স্বত্বআত্যি করে বডড, আর কিসে আমার ভাল হ ো সৰ্ব্বদা ওর সেদিকে— বিপিনের গলার স্বরে কৃষ্ণলাল একটু আশ্চৰ্য্য হইয়া উহার দিকে চাহিয়া ছিলেন, বিপিন আবার দেখিল সে মানীর সম্বন্ধে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলিয়া ফেলিতেছে। কি যেন অদ্ভুত নেশা ! মানীর সম্বন্ধে কতকাল কাহারও কাছে কোনো কথা ৰলে নাই। আজ যখন ঘটনাক্রমে তাহার কথা আসিয়া পড়িয়াছে, তখন আর থামিতে ইচ্ছা করে না কেন ? অনবরত তাহার কথা বলিতে ইচ্ছা করে কেন ? বিপিন আবার চুপ করিয়া রহিল। কৃষ্ণলাল বলিলেন, তা দেশ। তোমার সঙ্গে এবার বুঝি দেখাশুনো হয়েছিল ? শ্বশুরবাড়ী থেকে এসেছিল বুঝি ?