পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१8 বিভূতি-রচনাবলী নিন, সেই কখন বেরিয়েছেন, ব্রাহ্মণ দেবতা, স্নান-আহ্নিক না হলে তো জল খাবেন না, কষ্ট কি কম হয়েছে ! ওরে, জল আনলি নে ? খাবার জল ঘটি করে নিয়ে আয়, সন্ধ্যে-আহ্নিক হয়েছে কি ? বিপিন দেখিল দত্ত মহাশয় গোড়া হিন্দু। এখানে যদি স্বনাম অর্জন করিতে হয়, তবে তাহাকে সব নিয়মকানুন মানিয়া আচারনিষ্ঠ ব্রাহ্মণসস্তান সাজিয়া থাকিতে হইবে। স্বতরাং সে বলিল, সদ্ধ্যে-আহ্নিক নদী থেকে সারব ভেবেছিলাম কিন্তু তা তো হোল না, এখানেই একটু — —হঁ্যা হ্যা, আমি সব পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখানেই সেরে নিন। ও ভাগ্যে সে বাড়ীতে পা দিয়াই একঘটি জল চাহিয়া লইয়া খায় নাই ! তাহা হইলে এ বাড়ীতে তাহার মান থাকিত না। অবস্থা-বিপৰ্য্যয় ঘটিলে কি কষ্টেই পড়িতে হয় মাহবকে। —তা হলে রান্নার ব্যবস্থা করে দেব, না চি ড়ে থাবেন এ বেলা ? —না না, রান্না আর এত বেলায় করতে পারব না। এ বেলা যা হয় – দত্ত মহাশয় মহাব্যস্ত হইয়া বাড়ীর ভিতর চলিয়া গেলেন। নবম পরিচ্ছেদ Y বিপিন থাকে দত্ত মহাশয়ের চণ্ডীমণ্ডপে, পাশের একখানা ছোট চালাঘরে রাধিয়া খায় । দত্ত মহাশয় বাড়ী হইতেই প্রতিদিন চালডাল দেন, বিপিনের তাহা লইতে বাধ বাধ ঠেকিলেও উপায় নাই, বাধ্য হইয়। গ্রহণ করিতে হয়। একদিন রোগী দেখিয় সে একটি টাকা পাইল। দত্ত মহাশয়ের নাতিকে ডাকিয়া বলিল, হীরু, আজ তোমার মাকে বল, আজ আর আমায় সিধে পাঠাতে হবে না। রুগী দেখে কিছু পেয়েছি, তা থেকে জিনিসপত্র কিনে আনব । এখানে কিছুদিন থাকিয়া সে দেখিল একটা ডাক্তারখানা না খুলিলে ব্যবসা ভাল করিয়া চলিবে না। পাশের গ্রামের নাম কাপাসডাঙ্গা, সেখানে সপ্তাহে দুইবার হাট বসে, আট দশখানি গ্রামের লোক একত্র হয়। দত্ত মহাশয়ের সহিত পরামর্শ করিয়া সেখানে হাটতলায় এক চালাঘরে টিনের উপর আলকাতরা দিয়া নিজের নাম লিখিয়া ঝুলাইল। একটা কেরোসিন কাঠের টেবিলে অনেকগুলি পুরানো শিশি বোতল সাজাইয়া দত্ত মহাশয়ের চণ্ডীমওপ-হইতে সেই হাতলভাজা চেয়ারখানা চাহিয়া জানিয়া টেবিলের সামনে পাতিয়; রীতিমত ডিসপেনসারি খুলিয়া বসিল ।