পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\SS. বিভূতি-রচনাবলী পিসী এ বাড়ীতে বহুকাল ধরিয়া আছেন এবং বড় বৌয়ের দিকে টানিয়া মনরক্ষা করিয়াই চলিতে অভ্যন্ত । পিলী বলিলেন, তোমার যে কবে জ্ঞানগম্য কিছু হবে, তা এতটা বয়স হলেও আমি বুঝলাম না ছোট বউ। 哆 স্বলেখা কথা কহিল না । চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল । বড় বে। আজ অত্যন্ত চটিয়া গিয়াছেন। ছোট বোঁ স্বলেখাকে অভ্যস্ত স্নেহ করিলেও এবং তাহাকে ছোট বোনের মত দেখিলেও, খোকার পিঠের দাগগুলি দেখিয়া মার হৃদয় সহসা কাদিয়া উঠিল । তিনি টান মারিয়া প্রাচীরের উপর দিয়া বাশিটা বাহিরে ফেলিয়া দিলেন। স্থলেখা আপত্তি করিল না। একটা প্রতিবাদও তুলিল না। যেমন ভাবে দাড়াইয়৷ ছিল ঠিক তেমনি দাড়াইয়া রহিল। কিন্তু সমস্ত চোখে মুখে এক নিদারুণ বেদনা জাগিয়া উঠিল। বর্ষার দিনে সমস্ত আকাশ যেমন করিয়া মেঘ-ভারাক্রান্ত হইয়া সজল নয়নে চুপ করিয়া থাকে, তেমনি গাঢ় বেদনায় সে একান্ত নিরুপায়ের মত চুপ করিয়া রহিল । সন্ধ্যা হুইয়া আলিয়াছে। সমস্ত আকাশ ভরিয়া কালো আবছা অন্ধকার নামিয়া আসিল । দূরের গাছটার পাশ দিয়া স্বৰ্য্যদেব নামিয়া যাইতেছেন : সব কিছুর মধ্যে আজিকার মতে বিদায়ের ধ্বনি । - মুলেখা ছাদে আসিয়া ছাদের আলিস ধরিয়া দাড়াইয়া রহিল। আজ যেন কিছু তাল লাগে না। এই পরিপূর্ণ সন্ধ্য, এই মিষ্টি স্বন্দর হাওয়া, এই আলো, এই বাতাস —সব কিছু যেন তিক্ত বেদনায় ভরিয়া গিয়াছে। বাতাসে রোজকার মতো আছে সেই স্বর, সেই ছন্দ ; তৰু যেন ভালো লাগে না। হৃদয়ের কোন তন্ত্রী যেন কিসের আবাহনে আবার নিবিড় হইয়া উঠিল ; বিগত জীবনকে সে কত ভাবে কত দিক দিয়া তুলিতে চাহিয়াছে, কর্মের মধ্যে নিজেকে সযতনে নিয়োজিত রাখিবার কত প্রচেষ্টাই না সে দিনরাত করে—তবু পারে না। ঐ বাশিটাই যেন তাহাকে সজোরে তাছার গত জীবনের মধ্যে লইয়া আসে। স্থলেখা ছাদ হইতে সেই বঁাশিটার দিকে তাকাইয়া রহিল। একটা ইটের উপর বাশিটা চুপ করিয়া গুইয়া আছে। হলেখার দুই চোখ জলে ভরিয়া গেল। মনে তাৰিল ভালই হইল। ঐ অলুক্ষণে সৰ্ব্বনাশ বাশিটাই যত নষ্টের গোড়া ; ওটাই কিছুতেই তাহার বিগত জীবনকে ভুলিতে দেয় না। ভালই হইল। কিন্তু তবু যেন কিসের এক নিরবচ্ছিন্ন তীক্ষ্ণ স্বর তাহার কানে আসিয়া বাজিতে থাকে। সে সব কিছু ভুলিয়া যায়। মনে পড়িতে লাগিল সেই দিনের কথা, যখন এ গৃহে প্রথম সে আসে। বয়স জায় তখন কতই বা হইবে ওই বছর পনের বা ষোল – বা তারও কম। - স্বামীকে মনে পড়ে। বনোজ যেন আজও তার সম্মুখে দাড়াইয়া আছে। দ্বন্দর, গৌর