পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী এ বেড়াবাড়ী গ্রামের বাহিরে খুব বড় বড় মাঠ—আধ মাইল, কি তারও কম দূরে চুনী নদী। নদীর ধারে খেজুরগাছ, নিমগাছ ও ভার্টসেওড়ার বন। এখন নিমফুলের সময়, চৈত্রের তপ্ত বাতাসে নিমফুলের স্ববাস-মাখানো । ঘেটুফুলের দল কিছুদিন আগে ফুটিয়া শেষ হইয়া গিয়াছে-এখন শুধু রাঙা রাঙা স্বটির মেলা ভাটগাছের মাথায় মাথায়। উত্তর দিকের মাঠে প্রকাও একটা কচিপাতা-ভরা বটগাছের শীর্ষদেশ মাথা তুলিয়া দাড়াইয়। কিছুদিন আগে সামান্ত বৃষ্টি হইয়া গিয়াছে, চমা-ক্ষেতের মাঝে মাঝে জল জমিয়া ছিল, এখনও আধশুকনে কাদায় তার চিহ্ন আছে। একটা তুতগাছের তলায় অনেক শুকনো তুভফল পড়িয়া আছে। যন্ধুবাবু একটা তুতফল কুড়াইয়া মুখে দিলেন—মনে পড়িল, বাল্যকালে এই সময় তুতফল খাওয়ার সে কত আগ্রহ । কোথায় গেল সে সব স্বথের দিন। বাবা গোয়াড়ী কোটে কাজ করিতেন, শনিবারে শনিবারে গ্রামের বাড়ীতে আসিতেন, ছাড়ি-ভক্তি খালার আনিতেন ছেলেমেয়ের জন্য । তাদের বাড়ীতে মোংলা বলিয়া এক গোয়ালা-ছাড। পাকিত। সরভাজা খাইবার লোভে সে ছুটিয়া গিয়। রাস্তায় দাড়াইত—কৰ্ত্ত হাড়ি-হানে আসিতেছেন, না শুধু হাতে আসিতেছেন দেখিবার জন্য। নদীতে ডিঙি-নৌকায় জেলেরা মাছ ধরিতেছে! যদুবাবু বলিলেন, কী মছি রে ? —আজি খয়রা অাছে কর্তা । —দিবি চার পয়সার, যাব ? অনেক দিন দেশের খয়রা মাছ খাই নি। টাটকা খয়রা মাছটা— যদুবাৰু অবনীর দিদির হাতে মাছ দিয়া বলিলেন, ও দিদি, এই নাও। দেশের পয়র। মাছ কত কাল খাই নি । রাত্রে পাড়ার এক জায়গায় সত্যনারায়ণের সিন্নি উপলক্ষে যদুবাবু অবনীর সঙ্গে তাহাদের বাড়ী গেলেন। বাড়ীর কৰ্ত্ত যদুবাবুকে যথেষ্ট খাতির করিয়া সাইল, তামাক সাজিয়া আনিল নিজের হাতে। তাহার বড় ছেলের একটা চাকরি হইতে পারে কি না কলিকাতায় } ছেলেটিকে ডাৰিয়া আনিয়া পরিচয় করাইয়া দিল। ম্যাট্রিক দুইবার ফেল করিয়া সম্প্রতি আজ বছর খানেক বসিয়া আছে। পূৰ্ব্বেকার অভিজ্ঞতা হইতে যদুবাবু সাবধান হইয়াছিলেন, আবার কলিকাতার মেসে, কি বাসায় জুটিয়া উৎপাত করিতে শুরু করিলেই চক্ষুস্থির। পাড়াগায়ের লোককে বিশ্বাস নাই। সুতরাং তিনি বলিলেন, তিনি চেষ্টা করিবেন, তবে এখন কিছু বলিতে পারেন না—আজকাল কত বি. এ. এম. এ. পাস ফ্যাফ্যা করিতেছে, তা ম্যাটিক। রাত্রে স্ত্রীকে বলিলেন, তা হলে আর একটা মাস এখানে— —না, তা হবে না। অামায় নিয়ে যাও এবার। .–কিন্তু কোথায় নিয়ে যাই বল তো ? —ত তুমি বোঝ । বহুবাৰু মুখ ভ্যাংচাইয়া বলিলেন, তুমি বোঝ! বুঝি। কী, সেটা আমায় দেখিয়ে দাও । কলকাতায় কি বাস ঠিক করে রেখে এসেছি যে, তোমায় নিয়ে ওঠাব ? উঠবে কোথায়?