পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89१ বিভূতি-রচনাবলী এসেচি। বেশ লাগলো একটা দিন। তবে ম্যালেরিয়াতে সবাই ভুগচে। ফণি রায় ও আমি একসঙ্গে বেলা দুটোর গাড়ীতে চলে এলুম। ঘাটশিলা যেদিন এলুম, সেদিন স্বরেশ বাবুও এলেন আমার সঙ্গে । ক'দিন খুব জোৎস্না। আজ চতুৰ্দ্দশী, কাল কোজাগরী পূর্ণিমা। রাত ৮টা পৰ্য্যস্ত দ্বিজেন মল্লিকের বাড়ী বসে গল্প করলুম—তারপর মনে হোল আজ জ্যোৎস্নাটি মাটি করবো ? কোথাও যাবো না ? অত রাত্রে সেই অপূৰ্ব্ব জ্যোৎস্না রাতে হন হন করে হেঁটে চলে গেলুম ফুলডুংরি । রাত ন’টা । বেশি রাক্রির জ্যোৎস্না। আমার সেই প্রিয় স্থানটিতে পাথরের ওপর গিয়ে যোগাসনে বসলুম ! দূরে বুরুডি ও বাসাড়েরা পাহাড় ও বনানীর মাথায় একটি নক্ষত্র অনপ্তের হৃদস্পন্দনের মত টিপ টপ করে জলচে। জ্যোৎস্নাঙ্গাত বনভূমি ও ফুলডুংরি পাহাড়ের সে রূপে মন মুগ্ধ, স্তব্ধ ও বিস্মিত হয়ে উঠেচে । মুখে কথা বলতে পারি নে—এমন একটি অবশ, আড়ষ্ট ভাব । ভগবানের উপাসনা এখানে নীরব ও ভাবঘন, সমাহিত । বিশাল প্রান্তরের যে দিকে চাই—জ্যোৎস্নালোকিত ধরিত্রী যেন জন্মমরণ-ভীতি-ভ্রংশী কোন মহাদেবতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিলনের আনন্দে নিম্পন্দ সমাধিতে অন্তমুখী । শুধু দেখা যায় বসে বসে এর অপূৰ্ব্ব রূপ, শুধু অনুভব করা যায় গোপন অন্তরে এর সে নীরব বাণী । চারিদিকে নি:শব্দ ; এক ভো নির্জন প্রান্তর—এত রাত্রে এখানে কেউ আসে না—ভূতের ভয়ে স্থানীয় লোক এদিকে নাকি থাকে না বেশি রাত্রে—মানুষের গলার স্বর এতটুকু কানে গেলে মনের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায় আমার—সুতরাং প্রাণভরে এই নির্জনতা ও নৈঃশব্যের বাণী শুনলাম বসে বসে কত রাত পৰ্য্যন্ত । সন্ধ্যাবেলা এখানে বসলে ভয় হয়—এই বুঝি কোন কলকাতার চেন্‌জার বাবুরা পুত্রপরিবারসহ হাওয়া খেতে এসে পড়ে কলকোলাহল করতে করতে ! এত রাত্রে মন একেবারে নিরুদ্বেগ সেদিক থেকে। বেশ জানি এ সময় জনপ্রাণী আসবে না এদিকে। মন শঙ্কাশূন্ত ও নিরুদ্বেগ না হোলে কি প্রকৃতির সৌন্দৰ্য্যন্বধা উপভোগ করা যায় ঠিকমত ? আমি ক'দিন ধরে ভাবচি এমনি সব নির্জন স্থানের কথা । সেদিন পাঠকবাবু বলছিল, রাইপুর (C, P, ) থেকে ১৮৪ মাইল দূরে রাস্তার স্টেটের রাজধানী জগৎদলপুরের গল্প। ধামতারি ছাড়িয়ে (রাইপুর থেকে ৫০ মাইল দূৰ্ব ) ঘন বন পথের দুধারে—এমন এক বনের মধ্যে মানব বসতি থেকে বছরে খুব বড় বড় গাছের ছায়ায় শিলাসনে বসে আছি, সকাল বেলাটি, অসংখ্য পক্ষীকুলের কলরব, অদূরে স্নিগ্ধ সলিলা গোদাবরী (ওখানে অবিপ্তি গোদাবরী নেই, আমার কল্পনা ) কুলুকুলু রবে উপলবন্ধুর পথে বনপাদপের ছায়ায় ছায়ায় বয়ে চলেছে। নিৰ্ভয়ে বিচরণশীল মৃগযুথ আমার শিলাসনের কাছে কাছে তৃণ আহরণ করচে-এমন একটি ছবি প্রায়ই মনে আসে । কাল বিকেলে ফণি এল—ওর সঙ্গে অমরবাবু এলেচেন কিনা দেখতে গেলুম। পথে ব্রাউন লাহেবের সঙ্গে দেখা-ব্রাউন বল্পে, অমরবাৰু আসেনি। তারপর রেলের বাধের ওপর