পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপনিই ভেবে দেখুন, এতে স্কুলের কী ভাল হচ্ছে ? ছাত্র ছেড়ে গিয়েছে, রিজার্ড ফও নেই, মাইনে পাই না আমরা নিয়মমত। অথচ আপনি এই সব শিক্ষককে নিয়ে আলোচনা-সভার প্রহসন করচেন! আপনিই ভেবে দেখুন, এতে কী উপকার হয় ? এই সব টীচার মুখ ফুটে বলতে পারেন না ; কিন্তু চারটের পর আপনি এদের কাছে থেকে ভাল কিছু আশা করতে পারেন কি ? এবার হেডমাস্টারের পাল বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইবার। একজন সামান্ত বেতনের টীচারের কাছে তিনি এ ধরনের সোজা ও স্পষ্ট কথা প্রত্যাশা করেন নাই। বলিলেন, আমি কতদিন হেডমাস্টারি করছি, তা তোমার জানা আছে ? —ত। আমার জানবার দরকার নেই স্তার। কিন্তু আপনার এই শাসনপ্রণালী যে আদৌ ফলপ্রদ নয়, তা আপনাকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়াতে আপনি আমায় শত্রু ভাববেন না। আমি বন্ধুভাবেই এ কথা বলছি। আপনাকে সছুপদেশ দেওয়ার লোক নেই। মাস্টারেরা সকলে কাঠের মত বসিয়া আছেন। এমন একটা ব্যাপার তাহার কখনও এ স্কুলে ঘটতে পারে বলিয়া কল্পনাও করেন নাই। দুই-চারিজন সপ্রশংস দৃষ্টিতে নতুন টাচারের দিকে চাহিয়া রহিলেন। নতুন টীচার যে এমন চোপ্ত ইংরেজী বলিতে পারদর্শী—এ তথ্য আজই উাহারা অবগত হইলেন। হেডমাস্টারের মুখ লাল হইয়া উঠিয়াছিল। তিনি বলিলেন, তুমি কি বলতে চাও আমি স্কুল চালাতে জানি নে ? নতুন টীচার কী একটা উত্তর দিতে যাইতেছিলেন, এমন সময়ে নারাণবাবু নতুন টীচারকে বলিলেন, ভায়া, ছেড়ে দাও। আর তর্ক-বিতর্ক ক'রো না। সাহেব যা বলছেন, ওনার ওপর আর কথা বলো না । আশ্চর্য্যের বিষয়, সেই সভাতেই সাহেবের সামনে দুই-তিনজন টীচার, তাহাদের মধ্যে ক্ষেত্রবাৰু ও শ্ৰীশবাবু আছেন—নারাণবাবুর মধ্যস্থত। করিতে যাওয়ায় স্পষ্টতই বিরক্তি প্রকাশ করিলেন। - পিছন হইতে হেডমৌলবী বলিল, আহ, বলতে দেন ওনাকে নারাণবাবু, বাধা দেবেন না। আলম বেঞ্চির কোণে চুপ করিয়া বসিয়া আছেন, মুখে কথাটি নাই। নতুন টাচার বলিলেন, তার আপনি ভেটারান হেডমাস্টার, স্কুল চালাতে জানেন না, তাই কি বলছি ? কিন্তু আপনি স্কুলের বাজেট দেখে ব্যয়সঙ্কোচের ব্যবস্থা করুন, ছু মাসের মাইনে পাননি যে সব মাস্টার, তাদের নিয়ে ছটা পর্যন্ত নীর্টিং করা কি চলে শুরি ? নারাণবাবু বলিলেন, থাম ভায়া, থাম । দুই-তিনজন টীচার একসঙ্গে বলিয়া উঠিল, নারাণদা, ওঁকে বলতে দিন। হেডমাস্টার দেখিলেন, সভার সমবেত মত র্তাহারই বিরুদ্ধে—নতুন টীচারের স্বপক্ষে। তাহার নিজের স্কুলে বসিয়া এই তাহার প্রথম পরাজয়। - একটা দুৰ্বল কথা তিনি হঠাৎ বলিয়া বসিলেন। বলিলেন, কেন, চারটের পর আমি