পাতা:বিরাজবৌ-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ - ) প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র । এমন কি এই কাহিনীতে যে কয়েকজন স্বামী-স্ত্রী আছে, তাহীদের পরস্পরের মধ্যেও প্রখর বিভেদ আছে। নীলাম্বরে বিরাজে, ভালবাসা যতই থাকুক, প্রকৃতির বৈষম্যের দরুণ বিরোধের অন্ত নাই। পীতাম্বরের সহিত মোহিনীরও মতের বা মতির মিল একটুও নাই, যদিও লক্ষ্মী মেয়ে মোহিনী স্বামীর সহিত কলহ করে না । হরিমতি ও তাহার স্বামী যোগীন—ইহাদের মধ্যেও মনাস্তর না থাকিলেও মতাগুর আছে প্রচুর । কিন্তু বিভিন্ন প্রকৃতির মামুষের বিভেদই বড়ো কথা নয় । ইহার চেয়ে ( নাট্যকারের পক্ষে ) লোভনীয় বিভেদ শরৎচন্দ্ৰ দিয়াছেন একই মানুষের প্রকৃতির মধ্যে । পৃথক মানুষের মধ্যে পরস্পর বিরোধ ত আছেই, একই মামুষের মধ্যে কত বিরোধ হইতেছে। পূর্বের মামুষের সহিত পরের মানুষের কত প্রভেদ । বিরাজের সবার বড়ো পরিচয় তাহার সতীত্বাভিমান । তাই সেই বিরাজকে পরপুরুষের বজরায় উঠিয় কুলত্যাগ করিতে হইল । নীলাম্বরের মতো পত্নীগতপ্রাণ প্রেমিক স্বামী জগতে দুর্লভ । সেই নীলাম্বর উপবাসিনী রুগ্না সাধবী স্ত্রীকে কলঙ্ক দান করিল, কঠিন আঘাত করিয়া মাথা ফাটাইল । পীতাম্বর শঠ, পীতাম্বর শ্রদ্ধাবিশ্বাসহীন, পীতাম্বর স্বার্থপর। কিন্তু পীতাম্বর কালমৃত্যুর মুখে পড়িয়াও দাদার পা ছাড়িল না, প্রাণরক্ষার জন্তও রোজা ডাক্তার ঔযধ কিছুই স্বীকার করিল না। চিরকালের ভীতা সঙ্কুচিত মোহিনী একদিন নিঃসঙ্কোচ সত্য ও স্বাধিকারের শক্তিতে দুর্ভাগ্য-বিক্ষুব্ধ সংসারের হাল দৃঢ়মুষ্টিতে তুলিয়া লইল । এ সকল গুণ যদি নাটকীয় উপাদান না হয়, তবে নাটক প্রস্তুত হইবে কী লইয়া ? আর একটি অতি মূল্যবান নাট্যবস্তু শরৎচন্দ্র এই উপন্যাসে দিয়াছেন অজস্র—তাহা Dramatic Irony, ভাগ্যের বিড়ম্বন । নিজের সতীত্ব