পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৫১

এখনও বেঁচে আছি। মাঠে ঘাটে এত ফুল যে দেশটা এক প্রকাণ্ড মালঞ্চের আকার ধরেছে। দফাদিল (daffodil) কুসুমে মাঠ সব একেবারে বিছিয়ে গেছে। সত্যি সত্যিই দফাদিল—দিল আর্থাৎ মনের দফা রফা। আর করকাশ (Crocus) ফুলের রং-বেরঙের ঘটা দেখ্‌লে চোখ ফেরান দায়। প্রেমরোষগুলি (Primrose) বাস্তবিক যেন এক একটি অভিমানিনী―রোষভরে চেয়ে রয়েছে। যশোমণি (Jesso-mini) ও বোলাটের (violet) কথা আর কি বলবো—যে দেখেছে সে মজেছে।

এখানে ছেলে বুড়ো সব একেবারে ক্ষেপে উঠেছে। মুখে হাসি আর ধরে না। সূর্য্যদেবের অনুগ্রহ খুব হয়েছে। উদয় থেকে অস্ত পর্য্যন্ত চৌদ্দ ঘণ্টাকাল আকাশে অবস্থিতি করেন আর দুঘণ্টা গোধূলি। যোল ঘটা দিনমান। কিন্তু পৌষ মাসে ছঘণ্টা দিন আর তাও সূর্য্যদেব প্রায় যেঘে বাদলায় ঢাকা থাকেন। বেলা ছটার সময় রৌদ্র দিগ্‌দিগন্ত ফেটে পড়্‌ছে কিন্তু রাস্তায় জনমনুষ্য নাই। সকলের জানালা দরজা বন্ধ। পড়ে ঘুমুচ্চে। এখানে ঘড়ি ধোরে কাজ চলে―বেলা দেখে নয়। শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে খাওয়া শোয়া কাজ কর্ম্মের সব এক সময়।

অন্ধকারের পর এত আলো তাই লোকের খুব আনন্দ। এরা প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে এত মজে যায় যে ক্ষুধার্ত্ত ব্রাহ্মণও বোধ হয় লুচিমণ্ডা পেয়ে এমন আত্মহারা হয় না। ফুলভরা মাঠে বালক বালিকা যুবক যুবতী সত্যি সত্যি গড়াগড়ি দেয়।

আমি এখানে একটি বক্তৃতায় বলেছিলাম যে ইংরেজের নিকট প্রকৃতি―সম্ভোগের বস্তু বলিয়াই আদৃত হয়। তাই তাদের পক্ষে রূপের পূজা বা প্রতীক বা উপাসনা অসম্ভব হিন্দুসন্তান কি প্রকার রূপের পূজা করে