পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৭৩

গুরুপদে প্রতিষ্ঠিত হয়—যদি ইয়ুরোপ হোতে ছাত্র সকল ভারতবর্ষে দর্শন ন্যায় স্মৃতি সাহিত্য পাঠ করিতে আসে তাহা হইলে ভারতের প্রতি পাশ্চাত্য জগতের শ্রদ্ধা হইবে ও ঐ আসুরিক ভাবের হ্রাস হইবে। ভারত যে এখনও জগতের গুরুস্থানীয় তাহার আর সন্দেহ নাই। তবে ভারতের আত্মবিস্মৃতি ঘটিয়াছে তাই আজ অর্দ্ধশিক্ষিত ইংরেজ ভারতবাসীদিগকে কাউপার (Cowper) ও পোপ (Pope) মুখস্থ করাইয়া সাহিত্য শিখাইতেছে ও মারটিনোর [Martineau] ব্যাখা করিয়া দর্শন শাস্ত্র উপদেশ দিতেছে। ইহা অপেক্ষা লজ্জাকর বিষয় আর কি আছে। এই আত্মবিস্মৃতি কিসে যায়। আমি ভাবিলাম আমাদের শাস্ত্রবিদ্যা শিখিতে ইংরেজের যদি আগ্রহ হয় তাহা হইলে ভারতের আত্মবিস্মৃতি দূর হইবে ও ইংরেজেরও মঙ্গল হইবে। তজ্জন্য বিলাত-যাত্রা করিয়াছিলাম। গিয়া দেখি মোক্ষমূলর প্রভৃতি সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদিগের প্রয়াসে ভারতের কিছু সম্মান বাড়িয়াছে বটে―কিন্তু সে সম্মান না হওয়া ভাল ছিল। ইংরেজের ধারণা জন্মিয়াছে যে হিন্দুজাতি এক সময়ে বড় ছিল কিন্তু এখন মরিয়া গিয়াছে। কেবল তাহার ঠাটমাত্র বজায় আছে। যেমন পুরাতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা মিউজিয়মে কোন একটা প্রকাণ্ড জানোয়ারের কঙ্কাল দেখিতে যান ও বিচার করেন যে এই জীব কতদিন বাঁচিয়াছিল—কেনই বা এখন লোপ পাইয়াছে—তদ্রূপ য়ুরোপীয় পণ্ডিতেরা আমাদের বিষয়ের আলোচনা করেন। আমরা এককালে বড় ছিলাম। কিন্তু এখন সভ্যজগতের কাছে আমরা একটা কৌতুহলোদ্দীপক বস্তু হোয়ে দাঁড়িয়েছি। আমি এই সংস্কার দূর করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছি। আমি দেখাইয়াছি যে হিন্দুজাতি এখনও জীবন্ত। সহস্র সহস্র বৎসর হইয়া গিয়াছে তথাপি কালের প্রভাবে হিন্দু বিনাশ প্রাপ্ত হয় নাই। কত সভ্য জাতি ধ্বংসপুরে প্রয়াণ করিয়াছে কিন্তু হিন্দুজাতি