পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
বিলাত ফেরত

মরণকে অতিক্রম করিয়া অদ্যাপি জীবিত রহিয়াছে। উৎপত কত শোষণ কত বিপ্লব ভারতকে বিতাড়িত ও বিক্ষুব্ধ করিয়াছে। অন্য কোন দেশ ভারতের ন্যায় প্রপীড়িত ও দলিত হইয়াছে কি না সন্দেহ। তবুও হিন্দু সপ্রাণ ও সতেজ। ইহার কারণ কি। বেদান্ত প্রতিপাদিত অদ্বৈতজ্ঞান হিন্দুর একমাত্র অবলম্বন ও চির সহায়। হিন্দুর যােগ-দর্শন স্মৃতি-সাহিত্য-বিধি-ব্যবস্থা আচার-ব্যবহার-সংস্কার অদ্বৈতামৃতরসে পরিপুষ্ট। অদ্বৈতমুখীন নিষ্কাম ধর্ম্মপালনে হিন্দু রক্ষিত ও বর্দ্ধিত হইয়াছে। আমার এইরূপ ব্যাখা শুনিয়া কামব্রজ (Cambridge) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা প্রীত ও বিস্মিত হইয়াছিলেন। হিন্দু দর্শন তথায় নিয়মিত রূপে পঠিত ও আলােচিত হয়—এই উদ্দেশ্যে তাঁহারা একটী কমিটি গঠিত করিয়াছেন। একজন উপযুক্ত হিন্দু পণ্ডিত প্রেরিত হইলে এই কমিটি তথাকার বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ইহাঁকে তিন বৎসরের জন্য হিন্দুদর্শনের অধ্যাপকরূপে নিযুক্ত করাইবেন। নয় হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করিতে হইবে। এই নয় হাজার টাকা অধ্যাপকের বেতন স্বরূপ —বার্ষিক তিন হাজার টাকা করিয়া তিন বৎসর দেওয়া হইবে। আছেন কি কোন মহাজন যে এই নয় হাজার টাকা ভারতের গৌরব বৃদ্ধি করিতে প্রস্তুত। বিলাতে হিন্দুর দ্বারা হিন্দু দর্শন অধ্যাপিত হইলে আমাদের আত্মবিস্মৃতি ঘুচিতে পারে ও ভারত যে সকল জাতির গুরু তাহার প্রমাণ প্রয়ােগ আরম্ভ হইবে। কিন্তু যতদিন না য়ুরােপীয়েরা ভারতে হিন্দুর জ্ঞান ও ব্যবহার-শাস্ত্র শিখিতে আসে ততদিন আমার মন উঠিবে না। ভারতে এক বিশ্বজনীন সরস্বতীর পীঠস্থান কিরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহার স্বপ্ন সদাই দেখি। স্বপ্ন যাহাতে সত্য হয় তাহার অল্প স্বল্প আয়ােজনও করিতেছি। তবে তাহা বীজবপন মাত্র। ফলের কথা অনেক দূর।

ইংরেজ যদি বেদান্তের অদ্বৈতবিজ্ঞান শিক্ষা করে তাহা হইলে নিশ্চয়ই