পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রঘুনাথ শিরোমণি [ ১৪৬ ] রঘুনাথ শিরোমণি তর্ক উখাপনে তাহার লেখনী বন্ধ করিতে পারলেই সন্মুখীন হহয়। বিচার দ্বারা তাছাকে সস্তুষ্ট এবং তাহার মতসমূহ নিরাকৃত করিতে পারবেন এই আশায় প্রণোদিত্ত হইয়া একদিন রঘুনাথ তর্ক উত্থাপিত করিলে, তাছার তর্কে সত্ত্বঃ হইয় পক্ষধর মিশ্র তৎপ্রতি কটাক্ষ করিয়া পরিচয় জিজ্ঞাসাচ্ছলে বলিলেন,— “অখণ্ডল; সহস্রাক্ষে বিরূপাক্ষঞ্জিলোচন: | আহুে শ্বিলোচনা: সৰ্ব্বে কে। ভবনে কলোচনঃ ॥* রঘুনাথ অধ্যাপকের এই ব্যঙ্গোক্তিতে বিরক্ত হইয়। সগলের উত্তর করিয়াছিলেন : “মলদ্বীপকুশদ্বাপনবদ্বীপনিবাসিনঃ। তর্কসিদ্ধাস্তসিদ্ধাস্তশিরোমণিমনীষিণ: ॥* এই উত্তরে বুঝা যায় যে, নলদ্বীপবাসী তর্কসিদ্ধাস্ত ও কুশ স্বীপবাসী সিদ্ধাস্ত উপাধিধারী অপর দুই ব্যক্তি ও তাহার সহিত দ্যায়শাস্ত্র অধ্যয়নাথ মিথিলায় গিয়াiছলেন, এই দু০ জন কে ভছি। জানিতে পারা যায় না। পক্ষান্তরে প্রকাশ, ইহার। যখন প্রথম মিশ্রাবাসে উপনীত হন, ওখন রঘুনাথকে একচক্ষুহীন দেখিয়া পক্ষধরের ছাত্রগণ বিদ্রুপের সহিত ঐ শ্লোক পাঠে পরিচয় জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন । মিশ্রগুছে নানা দেশীয় ছাত্ৰগণ বঙ্গদেশীয় কণাপণ্ডিতের অস্তুত প্রাতভাদর্শনে মুগ্ধ হইয়াছিল । এই সময় পক্ষধর মিশ্র “সামান্ত লক্ষণ” নামে একখানি দ্যাল্পগ্রন্থ রচনা করিতেছিলেন । রঘুনাথের সঙ্গে মিশ্রবরের পুস্তক সম্বন্ধে বাদামুবাদ হয় । তিনি সামাগুলক্ষণ অস্বীকার করিয়া গুরুর গ্রন্থের দোষ বাহির করিয়া দিলেন । ইহাতে পক্ষধর ক্রোধান্ধ হইয়। বালক রঘুনাথকে শ্লেষাত্মক রুক্ষবাক্যে কহিলেন :--- “বগোপানকৃৎ কাণ সংশয়ে জাপ্রতি ফুটম্। সামান্ত লক্ষণা কৰ্ম্মাদ কৰ্ম্মাদ বলুপ্যতে ॥” রঘুনাথের একটী চক্ষুঃ ন থাকায় তাহাকে কাণা বলাতে তাহার মনে কষ্ট হইল, তিনি মাক্ষেপ করিয়া বলিলেন— "যোহন্ধং করোত্যক্ষিমন্তং যশ বালং প্রবোধয়েৎ । তমেবাধ্যাপকং মদ্যে তদন্তে নামধারিণ; ॥" কথা প্রসঙ্গে উভয়ের ঘোরতর তর্ক আরম্ভ হইল । রঘুনাথ চিস্তামণি গ্রন্থের কএকটা জটিল প্রশ্ন উথাপিত করিলেন । পক্ষধর বালকের অসাধারণ তর্কশক্তি ও স্থিরবুদ্ধি দেখিয়া চমৎকৃত হইলেন। তিনি সকল প্রশ্নের যথাযথ প্রত্যুত্তর দিতে না পারায়, রঘুনাথ সন্তুষ্ট ন হষ্টয়া বার বার তাহাকে উত্ত্ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। তখন পক্ষধর নৈয়ায়িকের চিরাভ্যস্ত বাক্যঙ্গাল বিস্তারে রঘুনাথকে পরাস্ত করিতে প্রয়াস পাইলেন, কিন্তু রঘুনাথ ছাড়িবার ছাত্র নহেন। যুক্তিতর্কে অধ্যাপককে পরাস্ত করিয়া তাহাকে নিজ মত সমীচীন বলিয়। স্বীকার করাই য়ু লইলেন । দেখিতে দেখিতে রঘুনাথের নাম সমগ্ৰ মিথিলায় ব্যাপ্ত হঠয়া পড়িল । পক্ষধর যদিও তাছার সহিত তর্কে সময় সময় পরাস্ত, অপ্রতিভ ও ক্রোধান্ধ হইতেন, তথাপি উপযুক্ত ছাত্রের প্রতি তাহার স্বভাবসিদ্ধ ভালবাস জন্মিয়াছিল । তিনি রঘুনাথকে নিজন গৃহে পাইয়া আলিঙ্গনপুৰ্ব্বক মনের তৃপ্তিসাধন করিলেন এবং তা হার মত-সমথনাথ পরদিন ও ভাঠে একটী সভা আহবান করিয়া সাধারণ সমক্ষে রঘুনাথের মত অভ্রান্ত বলিয়। স্বীকারপুৰ্ব্বক আপনার পরাজয় স্বীকার করিলেন। এই দিন হচতে নবদ্বীপের শিরোমণি যথাথ ই ভারতবর্যের শিরোমপি হইলেন । হহার পর একদিন চতুষ্পাঠাতে ক একজন অধ্যাপক ও বছসংখ্যক ছাত্র উপস্থিত আছেন এমন সময় পক্ষধর রঘুনাথের ব্যাকরণ ও কাব্যসম্বন্ধীয় শিক্ষার পরিচয় লহবার জন্তু তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হায়শাস্ত্র ভিন্ন অন্য কোন শাস্ত্রে তোমার অধিকার আছে ?” তখন রঘুনাথ উত্তর করিলেন—

  • কাব্যেহপি কোমলধিয়ো বয়মেব নাদ্যে তর্কে হপি কর্কশধিয়ো বয়মেব নান্তে । তন্ত্রেইপি যঞ্জিতধিয়ে। বয়মেব নাহুে

কৃষ্ণেইপি সংযতধিয়ো বয়মেব নান্তে ॥” - এই শ্লোক শ্রবণাস্তে পক্ষধর কহিলেন, “তুমি নৈয়ায়িক, কি রূপে কবিত। রচনা করিতে শিথিলে ?” তপন রঘুনাথ উত্তর করিলেন :– “কবিত্বং কিয়দৌল্লত্যং চিস্তামণিমনীষিণ: | নিপীতকালকুটস্ত তরস্তেবাছহিখেলনৰ্ম্ম ॥” এইরূপ উপস্থিত বহু কবিতা রচনায় তিনি পক্ষধ রকে মুগ্ধ করিয়াছিলেন । পক্ষধরের বিশ্বাস ছিল যে, পরম নৈয়ায়িক বা বৈয়াকরণ হইলে মানুষ কথনহ মুকবি হইতে পারে না । তাহার সে বিশ্বাস রঘুনাথের কবিতায় অপনোদিত হইল। দুৰ্গম স্থায়শাস্ত্রে, জটিল ব্যাকরণ-শাস্ত্রে, কোমল কাব্য-শাস্ত্রে, রঘুনাথের সমান অধিকার দেখিয়া তিনি বিস্থিত হইলেন। রঘুনাথ ইচ্ছা করিলেই মহাকাব্য রচনা করিতে পারিতেন । কয়েক বৎসর মাত্র মিথিলায় থাকিয় রঘুনাথ দ্যায়-শাস্ত্রে অদ্বিতীয় হইয়া উঠিলেন । আর্য্যাবৰ্ত্ত ও দাক্ষিণাত্য-নিবাসী ছাত্রগণ র্তাহার প্রতি বিদ্বেষাচরণ করিতে লাগিল । মিথিলী