দরিদ্রনারায়ণের মোহভঙ্গ
কারাকুমে তাদের ঘোড়া ভেড়া চরাতে এসে স্ত্রী-ছেলেপিলে নিয়ে ছাপ্পর বেঁধে থাকে; এক অঞ্চলের ঘাস-গাছড়া ফুরিয়ে গেলে হঠে বসে; শেষে গর্মি পড়ায় সবুজের পালা সাঙ্গ হলে, লটবহর গুটিয়ে দক্ষিণের পাহাড় পানে ধাওয়া করে।
সম্রাটের আমলে এই কারাকুমের ভিতর দিয়ে প্রথমে জল যাবার নহর, তার পর এক রেল লাইন চালিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাপারখানা কী। হঠাৎ বুঝি রাজার বা উজিরের মরুবাসীর পিপাসার কথা মনে পড়ায়, প্রজাবাৎসল্য উথলে উঠল?—তা নয়। মরুর ওপারে মধ্য-এসিয়ার বড়ো বড়ো নদীর ধারে যেসব জাঁকালো শহর, ফলন্ত খেতবাগান আছে, সেখানকার ভালো ভালো জিনিস আমদানির সহজ উপায় চাই, তারি এই আয়োজন।
জল না হলে ইঞ্জিন চলে না। রেলগাড়ি না দৌড়লে লম্বা পথ ফুরোয় না,—আগেকার দিনে বোগ্দাদের খলিফাকে রুশের সেরা খরমুজ সরবরাহ করতে হলে এক একটি ফল বরফভরা সীসেমোড়া আলাদা বাক্সবন্দী করে উটের পিঠে মরু পার করতে তিন তিন মাস লেগে যেত।
আর একটু কথাও আছে। রেলপথে যখনতখন ইচ্ছেমতো গাড়ি গাড়ি পল্টন পাঠাতে পারলে দেশটাকে বেশ সহজে শাসনে রাখা যায়।
যা হোক রেলগাড়ি চলল, মরুদেশ সম্রাটের তাঁবে এল, তাহলে বেদেরা অন্তত তাঁর প্রজা হওয়ার গৌরবটা তো পেল?—মাটেই তা নয়। এমন হতভাগা প্রজার উপর রাজাগিরি ফলাবার শখ মহামহিম রুশসম্রাটের ছিলই না, উলটে তাদের জ্বালায় রাজ-আমলারা অস্থির। জলের নহর পেয়ে দু’ধারে তারা ভিটে তুলে বসবাস ফাঁদে আর কি।
১৭