স্বে মহিম্নি
প্রকৃতির জীবধারা-রক্ষার উপায় যে দৈহিক প্রণয়, আর মানবাত্মার মহাযাত্রার পাথেয় যে বিদেহী প্রেম, এ দুইয়ের মধ্যে মানুষের মনে অনেককাল থেকে যেন একটা গোল পাকিয়ে রয়েছে।
কবি যখন বিলাপ করলেন—লাখো যুগ ধরে হিয়ায় হিয়া রেখে জুড়োনো গেল না, তখন এ সহজ কথাটা তিনি কি ভুলেছিলেন যে, হিয়ার মিলনের আনন্দের রেশ ক্ষণ-কয়েকের বেশি থাকে না?—তা তো সম্ভব নয়, তবে কী ভেবে তিনি তাতে যুগ ভরা আশের কথা তুলেছিলেন। মনে হয় তাঁর প্রিয়া তাঁর সঙ্গে এক আধ্যাত্মিক স্তরে ছিলেন না, তাই কাছাকাছি আসার কারণে আত্মায় আত্মায় যে স্বাভাবিক আকর্ষণ অনুভব করতেন, সেটা সত্যিকার প্রেমের মিলন পর্যন্ত পৌঁছতে পেত না,—না পেলেও কী-যেন-হলে-হতে-পারত, কী-যেন-হয়েও হল-না এ রকমের অস্ফুট আক্ষেপ কবির গভীরে রয়ে যেত।
যবন-দার্শনিক Plato এই বিদেহী প্রেমকে আলাদা করে চিনেছিলেন বলে মনে হয়। কিন্তু সে দেশেরই হোক, এ দেশেরই হোক, সেকেলে কবিরা সম-স্তরের সঙ্গীসঙ্গিনী না পাওয়ায়, বা যে কারণেই হোক, তাঁদের আদিরসের গুণগান দেহের বন্ধন ছাড়িয়ে উঠত না। অথচ আসল প্রেমের আকাঙ্ক্ষা তাঁদের ছিল নিশ্চয়ই, তাঁদের রচনাশক্তির তো কথাই নেই, তাই তাঁদের সোনার কাঠির পরশে তাঁরা প্রণয়কেই গিল্টি করে দিয়ে গেছেন। তাঁদের আধুনিক জাতভাইরাও অনেকে সেই কাজে লেগে আছেন।
ফলে, সাহিত্যজগতে প্রণয়কে যে রং চড়িয়ে রাখা হয়েছে, তাতে মানুষের বাস্তব জীবনে অনেক অলীক সাধবাসনা জেগে ওঠে, যার তৃপ্তির উপায় সাহিত্যেও দেখানো নেই, ভুল পথে খুঁজে পাঠকরাও পায় না, কাজেই হতাশ হয়, হা হুতাশ করে, নানা জালে জড়ায়। প্রণয়কে
১৬৩