বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ : সূৰ্য্যমুখী ও কমলমণি b" বলিয়া সূৰ্য্যমুখী ক্ষণকাল নীরবে রহিলেন–র্তাহার চক্ষের জলে বসন ভিজিয়া গেল —পরে সহসা মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কমল, কোন দেশে মেয়ে হলে মেরে ফেলে?” কমল মনের ভাব বুঝিয়া বলিলেন, “মেয়ে হলেই কি হয় । যার যেমন কপাল, তার তেমনি ঘটে।” সূ। আমার কপালের চেয়ে কার কপাল ভাল ? কে এমন ভাগ্যবতী ? কে এমন স্বামী পেয়েছে ? রূপ, ঐশ্বৰ্য্য, সম্পদ—সে সকলও তুচ্ছ কথা—এত গুণ কার স্বামীর ? আমার কপাল, জোর কপাল—তবে কেন এমন হইল ? কমল । এও কপাল । সু। তবে এ জালায় মন পোড়ে কেন ? কমল । তুমি স্বামীর আজিকার আহলাদপূর্ণ মুখ দেখিয়া মুখী—তথাপি বলিতেছ, এ জ্বালায় মন পোড়ে কেন ? স্কুই কথাই কি সত্য ? সূ । দুই কথাই সত্য । আমি তার মুখে সুখী—কিন্তু আমায় যে তিনি পায়ে ঠেলিলেন, আমায় পায়ে ঠেলিয়াছেন বলিয়াই তার এত আহলাদ !— - সূৰ্য্যমুখী আর বলিতে পারিলেন না, কণ্ঠ রুদ্ধ হইল—চক্ষু ভাসিয়া গেল, কিন্তু সূৰ্য্যমুখীর অসমাপ্ত কথার মৰ্ম্ম কমলমণি সম্পূর্ণ বুঝিয়াছিলেন। বলিলেন, “তোমায় পায়ে ঠেলেছেন বলে তোমার অন্তৰ্দ্দাহ হতেছে। তবে কেন বল “আমি কে ? তোমার অন্তঃকরণের আধখানা আজও আমিতে ভরা ; নহিলে আত্মবিসর্জন করিয়াও অনুতাপ করিবে কেন ?” সূ । অনুতাপ করি না । ভালই করিয়াছি, ইহাতে আমার কোন সংশয় নাই । কিন্তু মরণে ত যন্ত্রণ আছেই। আমার মরণই ভাল বলিয়া, আপনার হাতে আপনি মরিলাম। কিন্তু তাই বলিয়া মরণের সময়ে কি তোমার কাছে কঁাদিব না ? সূৰ্য্যমুখী কাদিলেন। কমল তাহার মাথা আপন হৃদয়ে আনিয়া হাত দিয়া ধরিয়া রাখিলেন । কথায় সকল কথা ব্যক্ত হইতেছিল না—কিন্তু অস্তরে অস্তরে কথোপকথন হইতেছিল। অন্তরে অন্তরে কমলমণি বুঝিতেছিলেন যে সূৰ্য্যমুখী কত দ্বাধী। অন্তরে অস্তরে সূৰ্য্যমুখী বুঝিয়াছিলেন, যে, কমলমণি র্তাহার দুঃখ বুঝিতেছেন। উভয়ে রোদন সম্বরণ করিয়া চক্ষু মুছিলেন। সূৰ্য্যমুখী তখন আপনার কথা ত্যাগ করিয়া, অন্যান্ত কথা পাড়িলেন। সতীশচন্দ্রকে আনাইয়া আদর করিলেন, এবং তাহার সঙ্গে কথোপকথন করিঙ্গেন। কমলের সঙ্গে, অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত সতীশ শ্রীশচক্রের কথা