ব্যাপার। এই সাধনা-যজ্ঞে ব্যক্তিত্বকে আহুতি দিতে হইবে। এখানে একটি প্রশ্ন স্বভাবতঃ মনে উঠিতে পারে যে, সাধনের দ্বারা সাধক যখন তাঁহার অহংবোধ বিলুপ্ত করিয়া দিলেন, তখন তাঁহার দেহ বিদ্যমান থাকে; তাঁহাকে তখন নানারূপ কার্য্য করিতে হয়। তাঁহার এই কর্ম্মগুলি কিরূপ? সংক্ষেপতঃ, ইহার উত্তর এই যে, স্থিরপ্রজ্ঞ সাধকের বাহ্যক্রিয়াগুলি তৃষ্ণা-সম্ভূত নহে; রূপ বেদনা সংজ্ঞা সংস্কার ও বিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত যে শক্তি সাধারণ মানবকে কর্ম্মে প্রণোদিত করে, সিদ্ধ সাধকের ক্রিয়াগুলি সেই শক্তি হইতে উদ্ভূত নহে। সুতরাং, তাঁহার কাজগুলি নূতন কর্ম্মের নূতন ব্যক্তিত্বের নূতন দুঃখের সৃষ্টি করিবে না।
অজ্ঞ শিশু দর্পণে আপনার প্রতিবিম্ব দেখিয়া কাঁপিয়া উঠে; কিন্তু যখনই সে ঐ প্রতিবিম্বকে প্রকৃতরূপে জানিতে পারে, তখনই তাহার ভয়ের সকল কারণ দূর হইয়া যায়। কর্ম্মের সত্যমূর্ত্তি আমাদের জ্ঞানগম্য নহে বলিয়া, কর্ম্ম আমাদের নিকট একটি বিভীষিকা হইয়া থাকে; কর্ম্ম পাপপুণ্যের শৃঙ্খল-হস্তে আমাদিগকে দণ্ড-পুরস্কার দিবার জন্য বিচারকের আসনে বসিয়া ক্রমাগত চোখ রাঙ্গাইতেছে, কিন্তু সাধকের নিকটে এই কর্ম্মের সমস্ত শক্তি পরাহত হয়; কারণ কর্ম্মতরু যে উৎসের রসধারা গ্রহণ করিয়া নানা শাখাপল্লবে ফলেফুলে বাড়িতে থাকে, সাধক সেই উৎসের মুখই রুদ্ধ করেন; তাঁহার তৃষ্ণাক্ষয় হইবামাত্র এই কর্ম্মতরু ছিন্নমুল ক্রমের ন্যায় ভূতলশায়ী হইয়া থাকে। এইরূপে সাধক ভাল মন্দ সকল কর্ম্মের বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া, শোকশূন্য নির্ম্মল ও শুদ্ধ হইয়া থাকেন। তৃষ্ণার মূলচ্ছেদন করিয়া সাধক তখন