পাতা:বৈজ্ঞানিক হিন্দুধর্ম্ম প্রথম ভাগ.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ১৩৫. ] বেদাস্ত মতে এই পরিদৃগুমান বিশ্বই পরব্রহ্মের রূপ। তিনি যে কেবল আকাশরুপে সৰ্ব্বত্র দেদীপ্যমান, তাহ নহে ; তিনিই মায়াযোগে বৰ্দ্ধিত হইয়া এই মায়াময় স্থল বিশ্বপ্রপঞ্চে পরিণত হইয়াছেন। ঈশ্বরসম্বন্ধে জগতে দুইপ্রকার মত প্রচলিত দেখা যায়, অদ্বৈতবাদ ও দ্বৈতবাদ । অদ্বৈতবাদিগণ ব্রহ্ম ও বিশ্বকে পৃথক জ্ঞান করেন না ; কিন্তু দ্বৈতবাদিগণ ঈশ্বর ও জগৎকে সম্পূর্ণ পৃথক জ্ঞান করেন। যেমন মানবমন ও মানবদেহ অবিভাজ্যরূপে সম্বদ্ধ, সংলগ্ন ও একত্রীকৃত, একের অস্তিত্ব অপরের অস্তিত্ব ব্যতীত থাকিতে পারে না ; সেইরূপ বিশ্ব ও ব্রহ্ম পরস্পর সম্বদ্ধ, সংলগ্ন ও একত্রীকৃত এবং উভয়েই এক পদার্থ। যেমন প্রলয়কালে স্থল ও স্বক্ষ বিশ্ব অব্যক্ত মূলপ্রকৃতিতে পরিণত হইয়া পরব্রহ্মে লীন হয়, সেইরূপ স্বষ্টির পর চিৎশক্তিসম্পন্ন পরব্রহ্মও উহার যে অংশটুকু মায়াযোগে বদ্ধিত হইয়। স্বল্প বা স্থল বিশ্ব প্রপঞ্চে পরিণত হয়, উহাতেই অন্তর্গন থাকে। কিন্তু যদি কেহ এমন ভাবেন যে, তিনি বিশ্বের অন্তরালে বর্তমান বা বিশ্ব হইতে পৃপকভাবে বর্তমান, তিনি ব্ৰহ্মসম্বন্ধে সহংস্রমে পতিত হন। স্বভাবতঃ আমরা মনের অস্তিত্ব দেহ হইতে পৃথকভাবে অনুভব. করি ; সেজন্ত আমরা সচরাচর ঈশ্বরকে জগৎ হইতে পৃথক জ্ঞান করি । এই ভ্রান্ত বিশ্বাসই জনসধারণের ভ্রমের প্রধান কারণ । এখন আধুনিক উন্নত জড়বিজ্ঞান ঈশ্বরসম্বন্ধে কিরূপ নির্দেশ করে, তাহাও এস্থলে উল্লেখ করা কৰ্ত্তব্য। এত মহৎ উন্নতি, এত গৌরবান্বিত আবিষ্কার, এত অত্যুজ্জল জ্ঞানালোকের মধ্যে বিজ্ঞান ক্ষীণস্বরে ও করুণস্বরে উপদেশ দেয়, বিশ্বের আদি কারণ মানববুদ্ধির অগম্য ; মানব কস্মিনকালে স্বীয় সসীম বুদ্ধি চালনা করিয়া এ রহস্য মীমাংসা করিতে পারেন না । বিজ্ঞান পাকে প্রকারে বিশ্বের অজ্ঞেয় আদিকারণ স্বীকার করে বটে ; কিন্তু ইহা লৌকিক ঈশ্বরের উপর খড়গহস্ত এবং উহাকে একতুড়িতে উড়াইয়া দিতে চেষ্টা পায়। যাহা হউক, বিজ্ঞানপ্রতিপাদিত বিশ্বের অজ্ঞেয় আদিকারণই অামাদের বেদীত্তের পরব্রহ্ম । - বিজ্ঞান স্পষ্ট নির্দেশ করে, যখন বিশ্বের আদি কারণ আমাদের নিকট সম্পূর্ণরূপ অজ্ঞেয়, তখন সেই অধিকারণ অন্বেষণ করিবার কি প্রয়োজন ?