পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অবন্তি তাহারা নিয়ত পাঠকের চিত্তে লৌকিক সত্যের অপেক্ষাও মহত্তর অতিকাল্পনিক সত্যের ইঙ্গিত আনিয়া দেয়। সামান্যকে অসামান্যীকরণের মধ্যে লেখক অবনীন্দ্রনাথের গভীর জীবনবােধের পরিচয়। অবনীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বাংলা গ্রন্থ দেশী-বিদেশী নানা ভাষায় অনূদিত হইয়াছে। ভ্র বিশ্বভারতী পত্রিকা, কার্তিক-চৈত্র ১৮৮১-৮২ শক, ১৩৬৬ বঙ্গাব্দ ; The Visva-Bharati Quarterly, MayOctober, 1942 ; Abanindranath Tagore, Journal of the Indian Society of Oriental Art, November, 1961. অমলেন্দু বসু। অবন্তি, -তী প্রাচীন ভারতের একটি পরাক্রান্ত জাতি এবং তদধূষিত জনপদের নাম ছিল অবন্তি। অবন্তি দেশের রাজধানী ছিল সিপ্রা নদীর তীরবর্তী উজ্জয়িনী নগরী। কখনও কখনও উজ্জয়িনীকে অবন্তি এবং সিকে অবন্তি নদী বলা হইয়াছে। নামটি কদাচিৎ ‘অবন্তী’ আকারে লিখিত দেখা যায়। প্রাচীন মালবজাতির নাম হইতে মধ্যযুগে দেশটির মালব বা পশ্চিম মালব নাম হয়। বৌদ্ধ কিংবদন্তী অনুসারে অবন্তি নামক জনৈক রাজা উজ্জয়িনীতে রাজত্ব করিতেন। পুরাণে রাজা অবন্তিকে যদুকুলের হৈহয় শাখার মাহিষ্মতী নগরাধিপতি কার্তবীর্যাজুন বংশীয় বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে বৌদ্ধ সাহিত্যে অবস্তিদক্ষিণাপথ সংজ্ঞক রাষ্ট্র ও উহার রাজধানী মাহিষ্মতীর উল্লেখ লক্ষণীয়। মাহিষ্মতী বর্তমান মধ্যপ্রদেশের নিমার অঞ্চলে অবস্থিত। অপর একটি পৌরাণিক কিংবদন্তী অনুসারে কার্তবীর্য বংশীয় তালজঘ হইতে তালজঘকুলের উদ্ভব এবং উহার পঞ্চশাখার নাম- ভােজ, বীতিহােত্র; শাৰ্যাত, অবন্তি এবং তুণ্ডিকের। | উপরে যে কিংবদন্তীগুলির উল্লেখ করা হইয়াছে, উহা হইতে অনুমান করা যায় যে প্রাচীন অবন্তি জাতির দেশ উজ্জয়িনী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল এবং একসময়ে দক্ষিণনর্মদা নদীর উপত্যকা পর্যন্ত অবন্তিগণের অধিকার প্রসারিত হইয়াছিল। এই সময় সুবিস্তৃত অবন্তি জনপদের উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে উজ্জয়িনী ও মাহিষ্মতীকে কেন্দ্র করিয়া দুইটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গড়িয়া উঠিয়াছিল বলিয়া বােধ হয়। এই দক্ষিণ অবন্তিকে বৌদ্ধ লেখকেরা অবন্তিদক্ষিণাপথ বলিয়াছেন এবং অনেক সময় উহাকে অশ্মক দেশের সহিত সংযুক্ত করিয়া অশ্মকাবন্তি শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। অশ্ম করাজ্যের রাজধানী ছিল অন্ধ্র প্রদেশের নিজামাবাদ জেলার অন্তর্গত বােধন ( প্রাচীন ‘পৌদন্য’ )।

________________

অতি সুতরাং অবন্তিদক্ষিণাপথ রাজ্য নর্মদার দক্ষিণে বহুদূর | বিস্তৃত ছিল বলিয়া বােধ হয়। অনেক স্থলে মাহিষ্মতী নগরীকে অনৃপ দেশের রাজধানী বলা হইয়াছে। মূল অবন্তিরাজ্য অর্থাৎ উজ্জয়িনী অঞ্চলকে বর্তমানে পশ্চিম মালব বলা হয়। কিন্তু খ্ৰীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত জনপদটির মালব নামকরণ হইয়াছিল বলিয়া বােধ হয় । কারণ চীন দেশীয় পরিব্রাজক হিউএন্-সাঙ উজ্জয়িনী এবং মালব দেশকে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করিয়াছেন। এই মালব গুজরাটের মহীনদীর নিকটে অবস্থিত ছিল। আবার বাণভট্ট তঁাহার কাদম্বরীতে উজ্জয়িনীকে অবন্তিজনপদের এবং বিদিশানগরী অর্থাৎ বর্তমান ভিলসার নিকট বর্তী বেসনগরকে মালব দেশের প্রধান নগর বলিয়াছেন। | এই প্রাচীন ধারা অবলম্বন করিয়া মধ্যযুগেও অনেকে পশ্চিম ও পূর্ব মালবকে যথাক্রমে অবন্তি ও মালব নামে উল্লেখ করিয়াছেন। উজ্জয়িনী অঞ্চল বুঝাইতে মালব নামের ব্যবহার সম্ভবতঃ খ্ৰীষ্টীয় দশম শতাব্দীতে জনপ্রিয় হইয়াছিল। এই সময় গুজরাটের অন্তর্গত মালবদেশ হইতে আসিয়া পরমারগণ পশ্চিম মালবে অধিষ্ঠিত হন। ভারতের ঐতিহে অবন্তি বা মালব অর্থাৎ পশ্চিম| মালবের রাজধানী উজ্জয়িনী নগরী সুপ্রসিদ্ধ। ইহার প্রথম | কারণ উজ্জয়িনীর সুপ্রসিদ্ধ মহাকাল মন্দির। দ্বিতীয়তঃ, ইহা কিংবদন্তীবর্ণিত সুবিখ্যাত শকারি বিক্রমাদিত্যের রাজধানী ছিল। এই বিক্রমাদিত্যকে খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮ অব্দ হইতে গণিত বিক্ৰমসংবতের প্রতিষ্ঠাতা বলা হইয়াছে। | অবশ্য প্রকৃতপক্ষে খ্রীষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর গুপ্তবংশীয় সম্রাট | দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কীর্তিকাহিনীই জনশ্রুতির ‘বিক্রমাদিত্য | কল্পনার মূল ভিত্তি বলিয়া মনে হয়। সম্ভবতঃ বৈদেশিক শকরাজগণ ভারতবর্ষে যে সংবতের ব্যবহার প্রচারিত করিয়াছিলেন, খ্ৰীষ্টীয় অষ্টম-নবম শতাব্দীতে উহার সহিত | বিক্রমাদিত্যের নাম সংযুক্ত হইয়াছিল। অবন্তির প্রাচীন ইতিহাসে পুরাণবর্ণিত প্রদ্যোতবংশ এবং গুপ্তপূর্বযুগের শকরাজবংশ সুপ্রসিদ্ধ। বিক্রমাদিত্য উপাধিধারী সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এই শকবংশ উৎখাত করিয়া পশ্চিমে আরব সাগর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করিয়াছিলেন। শক ও গুপ্তযুগে উজ্জয়িনী জ্যোতিষবিদ্যাচর্চার | একটি শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়।

u Nundo Lal Dey, The Geographical Dictionary of Ancient and Medieval India, London, 1927; B. C. Law, Historical Geography of Ancient India, Paris, 1954 ; G. P. Malalasekera, Dictionary of Pali Proper Names,
৮৪