পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অবতীপুর। London, 1937; Dinesh Chandra Sircar, Studies in the Geography of Ancient and Medieval India, Delhi, 1960. দীনেশচন্দ্র সরকার। অবন্তীপুর কাশ্মীর রাজ্যে, জম্মু হইতে শ্রীনগর যাইবার পথে, শ্রীনগর হইতে অনধিক ২৯ কিলােমিটার (১৮ মাইল ) দক্ষিণে (কিঞ্চিৎ পূর্বে ) ঊতিপুরা ও জৌব্রর নামক গ্রাম দুইটিকে কেন্দ্র করিয়া প্রাচীন ও মধ্যযুগের নগর অবন্তীপুরের ধ্বংসাবশেষ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ব্যাপিয়া ছড়াইয়া আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে এই স্থানের উচ্চতা ১৫৯০ মিটার ( ৫২১৭ ফুট)। প্রাচীন কাশ্মীরের উৎপল বংশীয় নরপতি অবন্তীবৰ্মা (৮৫৫৮৫৬-৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ) তাঁহার রাজত্বকালে নিজ নামানুসারে এই নগরের পত্তন করিয়া রাজধানী স্থাপন করিলেন। কাশ্মীরের সমসাময়িক সাহিত্য হইতে এবং অবন্তীপুরের ধ্বংসস্তুপ হইতে প্রাপ্ত তােরমানের তাম্রমুদ্রা হইতে অনুমান করা হয় যে, ষষ্ঠ ও সপ্তম খ্ৰীষ্টাব্দে হুনদিগের রাজত্বকাল হইতেই ( অবশ্য শ্রীভরের সাক্ষ্য হইতে জানা যায়, তােরমানের মুদ্রা পঞ্চদশ শতাব্দী অবধি প্রচলিত ছিল) অবন্তীপুর চীন, তিব্বত, মধ্য এশিয়া ও গান্ধারের বাণিজ্যপথে অবস্থিত অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল । একাদশ শতাব্দীর লেখক ক্ষেমেন্দের পুস্তক ‘সময়মাতৃকা’, দ্বাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত কাশ্মীরী ঐতিহাসিক কণের ‘রাজতরঙ্গিণী’ ও পরবর্তী কালের অন্যান্য গ্রন্থাদির সাক্ষ্য হইতে অনুমিত হয় যে অবন্তীবৰ্মা কর্তৃক এখানে রাজধানী স্থাপিত এবং তৎপুত্র শংকরবর্মা কর্তৃক রাজধানী এখান হইতে শংকরপুরপটুনে স্থানান্তরিত হইবার পর বহুকাল পর্যন্ত এই নগরের গুরুত্ব অক্ষুন্ন ছিল। | অবন্তীপুরে কাশ্মীরের প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের দুইটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শনের ভগ্নাবশেষ রহিয়াছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাদে, অবন্তীপুরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে, জৌব্রর গ্রামের প্রান্ত ভাগে, কলণ এবং অন্যান্য গ্রন্থকার বর্ণিত, অবন্তীবর্মার রাজত্বকালে তঁহারই উৎসাহে নির্মিত অবন্তীশ্বর শিবমন্দিরের ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরটি আবিষ্কৃত হইয়াছে। বেষ্টনী লইয়া মন্দির প্রাঙ্গণের আয়তন ৬৬ মিটার X ৬১ মিটার ( ২১৮x২০০ ফুট); মন্দিরের ভিত্তিভূমির ক্ষেত্রফল ৫৩০ বর্গ ডেসিমিটারের ( ৫৭ বর্গফুটের) অধিক। উৎপল রাজবংশীয়রা ছিলেন শৈবধর্মাবলম্বী।

নৃপতি অবন্তীবৰ্মা স্বয়ং বিষ্ণুভক্ত ছিলেন। তাঁহার

________________

অবন্তীপুর উৎসাহে নির্মিত অবন্তীস্বামী বিষ্ণুমন্দিরটির নির্মাণকার্য সম্ভবতঃ অবন্তীপুরে রাজধানী স্থাপনের পূর্বেই আরম্ভ হইয়াছিল। প্রাগুক্ত মন্দিরটির তুলনায় ইহা আয়তনে ক্ষুদ্র। মন্দির প্রাঙ্গণের ক্ষেত্রফল ৫৩ X ৪৫ মিটার ( ১৭৪ x১৪৮ ফুট) ও মধ্যবর্তী দেবালয়টির আয়তন ৩০৭ বর্গ ডেসিমিটার (৩৩ বর্গফুট )। পূর্বোক্ত মন্দিরটির ৮০৫ মিটার ( অর্ধমাইল) দক্ষিণে, ভাতিপুর গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি সম্ভবতঃ রাজপরিবারভুক্ত ব্যক্তিদের পূজার্চনার জন্য নির্মিত হইয়াছিল। ধ্বংসপ্রায় হইলেও এই মন্দিরটি অবন্তীশ্বর শিবমন্দিরের তুলনায় অভগ্ন। | অবন্তীশ্বর মন্দিরটি এত ধ্বংসপ্রাপ্ত যে তাহা হইতে | উহার স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা সম্ভব নহে। তুলনায় অবন্তীস্বামী মন্দিরটি এতদবিষয়ে অধিকতর আলােকপাত করে। তুষারপাতের দেশ কাশ্মীরের কাষ্ঠনির্মিত গৃহের শীর্ষরচনারীতি হইতে প্রাপ্ত, সরলরৈখিক পিরামিডাকৃতি দুই বা তিন স্তরে রচিত ত্রিভুজাকৃতি শীর্ষ, কাশ্মীরের মন্দিরস্থাপত্যের প্রথম বৈশিষ্ট্য হিসাবে এই মন্দিরদ্বয়েরও শােভাবর্ধন করিত। এই রীতির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য, দ্বিস্তর (বা ত্রিস্তর) ত্রিভুজাকৃতি কৌণিক খিলানের ব্যবহার, অবন্তীস্বামী মন্দিরের প্রায়ভগ্ন দ্বারপথগুলিতে আজিও অংশতঃ দৃশ্যমান। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য, ‘ডােরিক রীতির ‘কলাম’-এর ন্যায় স্তম্ভের ব্যবহার ; কক্ষবিশিষ্ট চতুষ্কোণ মন্দিরবেষ্টনীতে এবং খিলানের অবলম্বন হিসাবে ব্যবহারে সর্বত্র এই স্তম্ভের প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হইত ; অবন্তীস্বামী মন্দিরবেষ্টনীটি আজিও তাহার সাক্ষ্য বহন করিতেছে। অবন্তীশ্বর মন্দিরটির ন্যায় অবন্তীস্বামী মন্দিরটিও পঞ্চায়তন শ্রেণীর মন্দির ; কিন্তু মধ্যস্থলে অবস্থিত | দেবালয়টির তুলনায় ক্ষুদ্রকায় চারিটি মন্দির পৃথক পৃথক ভাবে অঙ্গনের চারিটি কোণে অবস্থিত। আকারে এবং আকৃতিতে মধ্যবর্তী দেবালয়টির অনুরূপ অবন্তীস্বামী প্রবেশদ্বারগৃহটি অংশতঃ ভগ্ন অবস্থায় আজিও পরিলক্ষিত হয়। অবন্তীস্বামী মন্দিরের ভাস্কর্যালংকার-সংবলিত ভিতটি মােটামুটি অক্ষত অবস্থায় রহিয়াছে। স্থাপত্যের সহিত একই সময়ে কাশ্মীরের ভাস্কর্যশিল্পও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। অবন্তীপুরের ধ্বংসস্তুপ হইতে প্রাপ্ত প্রচুর শৈব ও বৈষ্ণব মূর্তি এবং তৎসহ কার্তিকেয় প্রভৃতি অন্যান্য দেব-দেবীর মূর্তি সেই সাক্ষ্য বহন করে।

Sunil Chandra Roy, Early History and Culture of Kashmir, Calcutta, 1957 ; R. C. Kak, Ancient Monuments of Kashmir, London, 1933 ; James Fergusson, History of Indian and Eastern
৮৫