পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অফ অব্দের ব্যবহার চলিয়া আসিতেছে। প্রাচীনকালে প্রতাপশালী রাজাদিগের অভিষেককাল হইতে এক প্রকার অব্দ গণনা হইত। এই রাজকীয় অক অধিক কাল প্রচলিত থাকিত না, নূতন রাজার অভিষেকে আবার নূতন অব্দের প্রচলন হইত। স্বল্পকালব্যাপী এই প্রকার অব্দের দ্বারা কালনির্ণয়ের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ সাধিত হইত না। এই অসুবিধা দূর করিবার উদ্দেশ্যে রাজগােষ্ঠীর আদিকাল হইতে অব্দ গণনার প্রথা প্রচলিত হয়। কোনও কোনও স্থলে প্রথম দিকে এই অব্দসংখ্যা একশতের অধিক হইয়া গেলে, শতসংখ্যা বাদ দিয়া গণনা চালাইয়া যাওয়া হইত। পরে এই প্রথাও পরিত্যক্ত হয় এবং ক্রমবর্ধমান অখণ্ড অব্দ গণনা পদ্ধতি প্রচলিত হয়। অতি প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে পঞ্চবর্ষাত্মক যুগের প্রচলন ছিল। সুলতঃ দেখা যায় যে প্রতি পাঁচ বৎসর পর পর রবি ও চন্দ্র আকাশের একই স্থানে মিলিত হইয়া থাকে- ইহা হইতেই পঞ্চবর্ষাত্মক যুগের উৎপত্তি। বেদাঙ্গ জ্যোতিষে (প্রায় ১৩৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ ) এই যুগের ভিত্তিতে পঞ্জিকা গণনার পদ্ধতি বিবৃত আছে। পরবর্তী কালে রচিত মহাভারতে দেখা যায় পাণ্ডবগণের বনবাসের চতুর্দশ বৎসর পূর্ণ হইল কিনা গণনা করিবার জন্য এই পঞ্চবাত্মক যুগের ব্যবহার করা হইয়াছে। ২ শকাব্দকাল ( অর্থাৎ ৮০ খ্রীষ্টাব্দ) পর্যন্ত এই পঞ্চবর্ষাত্মক যুগ গণনা পদ্ধতি এ দেশে প্রচলিত ছিল বরাহমিহিরের পঞ্চসিদ্ধান্তিকা হইতে ইহা জানা যায়। অনুমিত হয় যে পাঁচ বৎসরের এই যুগ গণনা পদ্ধতি আরও প্রাচীন কাল হইতে অর্থাৎ বৈদিক সংহিতসমূহ রচনার কাল হইতে এ দেশে প্রচলিত ছিল। অদ্যাবধি এই যুগের উল্লেখ পঞ্জিকায় দেখিতে পাওয়া যায়। বৃহস্পতিগ্রহ দ্বাদশ বৎসরে একবার রাশিচক্র আবর্তন করে, ইহার ভিত্তিতে দ্বাদশবর্ষাত্মক যুগের উৎপত্তি। প্রাচীন কালে এই পঞ্চবৰ্বাত্মক ও দ্বাদশবর্ষাত্মক যুগ দ্বারাই অব্দ গণনার কার্য সাধিত হইত। পরে এই দুই যুগের সমন্বয় দ্বারা যষ্টিবাত্মক। যুগের উৎপত্তি হয়। ষাট বৎসরের এই যুগ গণনা পদ্ধতি খ্ৰীষ্টীয় পঞ্চম শতকের অনেক পূর্বেই প্রবর্তিত হয় এবং এখনও সর্বভারতে ইহা প্রচলিত। দক্ষিণ ভারতে যষ্টিবর্ষাত্মক এই বাৰ্হস্পত্য বর্ষ দ্বারাই অদ্যাবধি অব্দ গণনার কাজ চলিয়া আসিতেছে। যদিও পঞ্জিকায় অন্যান্য অব্দেরও উল্লেখ থাকে, তথাপি এই বাৰ্হস্পত্য বই তথায় প্রধানতঃ ) উল্লিখিত হয়। এই অব্দ গণনায় ৬০টি বৎসরের পৃথক। পৃথক নাম আছে এবং প্রতিটি অঙ্গ এক সৌর বৎসরে বা সৌর-চান্দ্র বৎসরে পূর্ণ হয়। উত্তর ভারতের পদ্ধতি এই ভা ১১২

________________

| বিষয়ে একটু পৃথক, তথায় বৃহস্পতিগ্রহের একটি রাশি ভােগ কাল অর্থাৎ ৩৬১ দিনে এক বাম্পত্য বর্ষ পূর্ণ হয়। ফলে বৎসরের যে কোনও দিনে এই বৎসর আরম্ভ হইতে পারে। কিন্তু উত্তর ভারতে ইহাকে অব্দ রূপে ব্যবহার করা হয় না। অতি প্রাচীন কাল হইতে শতাব্দী গণনার জন্য একটি পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। ইহাতে এক-এক শতাব্দীকে ভচক্রস্থ ২৭টি নক্ষত্রের নামে অভিহিত করা হইত। কল্পনা করা হয় যে সপ্তর্ষিগণ একশত বৎসর ধরিয়া একএক নক্ষত্রে অবস্থান করেন। ইহাকে সপ্তর্ষিচার বা লৌকিক কাল বলা হয়। এই শতাব্দীর অন্তর্গত বৎসরগুলিকে একাদিক্রমে ১০০ পর্যন্ত গণনা করা হইত অথবা পঞ্চবর্ষাত্মক যুগের ২০টি যুগে বিভক্ত করা হইত। কাশ্মীর ও তন্নিকটবতী প্রদেশে এই প্রকার অব্দ গণনা প্রচলিত ছিল। কাশ্মীরের ঐতিহাসিক কহ্নণ পণ্ডিতের ১১৫০ খ্রষ্টাব্দের গ্রন্থে এই অব্দের এবং তৎসহ পাণ্ডবকালের উল্লেখ আছে। এই সপ্তর্ষিকালের আরম্ভ সম্বন্ধে মতদ্বৈধ বিদ্যমান। বৃদ্ধগর্গ ও পুরাণ মতে মঘাকাল (বা মঘাশতাব্দী) আরম্ভ হইয়াছিল ৩১৭৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। কিন্তু বরাহমিহিরের মতে মঘাকালের আরম্ভ ২৪৭৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। ভারতের অন্যত্র কিন্তু এই সপ্তষিকাল ব্যবহৃত হইবার কোনও উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায় না। কহলণ পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরাব্দেরও উল্লেখ করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে বৃদ্ধগর্গের রচনানুসারে যুধিষ্ঠিরাব্দের আরম্ভকাল ২৪৪৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। বরাহমিহিরও ইহাই বলিয়াছেন।

৩১০২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্য-রাত্রিতে অথবা ১৮ ফেব্রুয়ারির সূর্যোদয়কালে কলিযুগের আরম্ভ ধরিয়া ঐ সময় হইতে কল্যব্দ গণনা করা হয়। কল্যব্দ সর্বভারতে প্রচলিত এবং সকল পঞ্জিকাতেই ইহার উল্লেখ দেখা যায়। এই অব্দের আরম্ভকাল অতি প্রাচীন হইলেও ইহার প্রচলন তত প্রাচীন নহে। ৪৯৯ খ্রীষ্টাব্দে আর্যভট প্রথম কল্যব্দের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে তাহার কালে কলির ৩৬০০ বৎসর অতীত হইয়াছিল। পণ্ডিতগণ মনে করেন যে আর্যভট বা তাহার অল্পকাল পূর্ববর্তী কোনও জ্যোতির্বিৎ জ্যোতির্গণনার সুবিধার জন্য। এই অব্দের প্রবর্তন করিয়াছিলেন। তৎকালে জ্ঞাত গ্রহগতির দ্বারা পশ্চাৎ গণনা করিয়া আর্যভট দেখিয়াছিলেন যে, ৩১০২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রাহু ব্যতীত সকল গ্রহের মধ্যাবস্থান মেষাদির অতি সন্নিহিত হয়। তাই তিনি সকল মধ্যস্থানকেই শূন্য কল্পনা করিয়া ঐ দিবসকে কল্যাদি বলিয়া ঘােষণা করেন। কিন্তু আধুনিক গণনা দ্বারা জানা
৮৯