পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অধ যায় যে উক্ত কালে মধ্যগ্ৰহসকল একত্র ছিল না, প্রায় ৫০ ডিগ্রির মধ্যে ছড়াইয়া ছিল। ৬৩৪-৩৫ খ্রীষ্টাব্দের এক শিলালিপিতে কল্যব্দের প্রথম ব্যবহার দেখা যায়। উপরে যে সকল অব্দের কথা বলা হইল, তাহার কোনটিই যে খ্ৰীষ্টপূর্বাব্দে এ দেশে প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল, তাহা মনে হয় না। সম্রাট অশােক তাহার শিলালিপিতে এই সকল কোনও অব্দ ব্যবহার না করিয়া তাহার রাজ্যাভিষেকের অব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। সেইজন্য তাহার রাজ্যাভিষেকের সঠিক কাল নির্ণয় করা ঐতিহাসিকের পক্ষে এক সমস্যাস্বরূপ। উক্ত কাল ২৭৩ হইতে ২৬৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে ধরা হয়। উত্তর ভারতের বাংলা দেশ ব্যতীত প্রায় সর্বত্র বিক্রমসংবং প্রচলিত। ইহার আরম্ভকাল ৫৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ। কথিত আছে যে, বিক্রমাদিত্য নামে উজ্জয়িনীর এক রাজা কর্তৃক এই অব্দ প্রবর্তিত হয়। কিন্তু ৫৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে উজ্জয়িনীতে বিক্রমাদিত্য নামে কোনও রাজার অস্তিত্ব । ইতিহাস হইতে পাওয়া যায় না। বিক্রমসংবৎ নামে এই অব্দের সর্বপ্রথম ব্যবহার দেখিতে পাওয়া যায় কাঠিয়াওয়াড় রাজ্যে প্রাপ্ত এক শিলালিপিতে। উহাতে ৭৯৪ বিমাদের উল্লেখ আছে। ইহাকে মালবগণাব্দ এবং কৃতাব্দও বলা হইত। রাজস্থানে প্রাপ্ত এক শিলালিপিতে ২৮২ কৃতাব্দের উল্লেখ আছে। বর্তমানে উত্তর ভারতে চৈত্র শুক্লপ্ৰতিপদ হইতে সংবৎ আরম্ভ হয়। গুজরাটে এই অব্দ উহার কার্তিক শুক্ল প্রতিপদ হইতে আরম্ভ হয় এবং কচ্ছে আষাঢ় শুক্ল প্রতিপদ হইতে সংবতের আরম্ভ।

৭৮ খ্রীষ্টাব্দ হইতে শকাব্দের আরম্ভ। এই অব্দ প্রায় সর্বভারতেই প্রচলিত। দক্ষিণ ভারতে ইহা শালিবাহনাব্দ বা শালিবাহন শক নামে প্রসিদ্ধ। এই অব্দের প্রবর্তক কে তাহা নিশ্চিতরূপে জানা যায় নাই, যদিও কোনও কোনও ঐতিহাসিক মনে করেন যে, সম্রাট কণিষ্কই ইহার প্রবর্তক। শককাল, শকভূপকাল, শকেন্দ্রকাল এবং শকসংবৎ নামান্তরেও এই অব্দ প্রচলিত। চান্দ্রগণনায় চৈত্র শুক্ল প্রতিপদ হইতে এবং সৌরগণনায় মেষাদি হইতে সাধারণতঃ এই অব্দ গণিত হইয়া থাকে। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, এই শককালের পূর্বে আর একটি শকাব্দ প্রচলিত ছিল। শকরাজগণ কর্তৃক ব্যাট্রিয়া বিজিত হইবার সময় ১১৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এই প্রাক্তন শকাব্দ প্রবর্তিত হয়। ইহা অনেক ক্ষেত্রে এজেস (Azes) -অব্দ বলিয়াও পরিচিত ছিল। ইহার প্রথম ২০০ বৎসর ধরিয়া অর্থাৎ ৭৮ খ্রীষ্টাব্দ কাল পর্যন্ত শতসংখ্যা অনেক সময় বাদ দিয়া এই অব্দ ব্যবহার করা হইত। তৎপর কণিষ্কের কাল

________________

অব্দ হইতে নিরবচ্ছিন্নভাবে শতসংখ্যা বাদ না দিয়াই এই অব্দ ব্যবহৃত হইতেছে। বরাহমিহিরের কাল (মৃত্যু ৫৮৭ খ্র) হইতে অদ্যাবধি ভারতের সকল জ্যোতিষ গ্রন্থে এই শকাব্দ ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে। বর্তমানে | ভারত সরকার এই শকাব্দকেই সর্বভারতে ব্যবহারযােগ্য অব্দ হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। বুদ্ধাব্দ বা বুদ্ধনির্বাণকাল হিসাবে এক অব্দ প্রচলিত আছে। উহার আরম্ভকাল ৫৪৫ খ্ৰীষ্টপূর্বাব্দ। খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী হইতে এই অব্দ সিংহলে প্রচলিত দেখা যায়, কিন্তু ভারতবর্ষে এই অব্দের প্রচলন এয়ােদশ শতাব্দীর পূর্বে ছিল না। বুদ্ধনির্বাণের প্রকৃত কাল সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণ কিন্তু একমত নহেন। কেহ কেহ মনে করেন যে, ৪৮৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে বুদ্ধদেব নির্বাণ লাভ করেন। বৌদ্ধদের মত জৈনদিগের মধ্যেও মহাবীরের নির্বাণকাল হইতে এক অব্দ গণনার প্রচলন আছে। উহার আরম্ভকাল ৫২৮ খ্রীষ্টপূর্ব। | গুপ্তরাজবংশের প্রথম চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক ৩১৯ খ্রীষ্টাব্দে গুপ্ত অব্দ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সৌরাষ্ট্র হইতে বঙ্গদেশ পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারতে এই অব্দ প্রচলিত ছিল। গুপ্তবংশের পতনের পরে কাঠিয়াওয়াড়ের অন্তর্গত বলভীদেশের রাজগণ এই অব্দ ব্যবহার করিতেন। এইজন্য ইহা গুপ্তবলভীসংবৎ নামেও পরিচিত। পরবর্তী কালে গুজরাট ও রাজপুতানায় ত্রয়ােদশ শতাব্দী পর্যন্ত কোথাও কোথাও এই অব্দের প্রচলন দেখা যায়। ২৪৮-৪৯ খ্রী হইতে একটি অব্দের প্রচলন হয়। ইহা কলচুরি বা চেদি অব্দ নামে অভিহিত। ইহা মধ্য প্রদেশে প্রচলিত ছিল। অনেকে মনে করেন যে হর্ষবর্ধনের সিংহাসনে আরােহণ উপলক্ষে ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দে একটি অব্দ প্রচলিত হয়। ইহা হর্ষাব্দ নামে পরিচিত। ভাটিক নামে একটি অব্দ কয়েকটি শিলালিপিতে উল্লিখিত আছে। ৬২৪ খ্ৰী হইতে ইহার গণনা আরম্ভ হয়। উড়িষ্যায় গাঙ্গেয় সংবং প্রচলিত | ছিল। সম্ভবতঃ খ্ৰীষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষে অথবা ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই অব্দের প্রতিষ্ঠা হয়। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজগণ একটি অব ব্যবহার করিতেন। স্থানীয় প্রবাদ অনুসারে এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা আদিমন্ত্রের রাজ্যকাল ৬৯৪ খ্ৰী হইতে ইহার গণনা আরম্ভ হয়।

মিথিলায় লক্ষ্মণসংবৎ নামে এক অব্দ প্রচলিত আছে। ইহা যে বাংলার সেন বংশীয় রাজা লক্ষ্মণসেনের স্মৃতি | বহন করিতেছে, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু এই অব্দ রাজা লক্ষ্মণসেনের সিংহাসনে আরােহণকালে
৯০