পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অন্নামলৈ নগর
অপভ্রংশ সাহিত্য

সাত বা নয় মাস বয়স প্রশস্ত। নামকরণের উৎসবও এই উৎসবের সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। দশবিধ সংস্কারের অন্তর্গত এই দুই সংস্কার উপলক্ষে বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ হােম প্রভৃতি করণীয়। তবে এই সমস্ত কার্য এখন আর অবশ্যকর্তব্য বলিয়া বিবেচিত ও সর্বত্র অনুষ্ঠিত হয় না। বস্তুতঃ অন্নপ্রাশনের উৎসব কতকটা বজায় থাকিলেও নামকরণের অনুষ্ঠান এখন লুপ্তপ্রায়।

চিন্তাহরণ চক্রবর্তী

অন্নামলৈ নগর চিদম্বরম দ্র

অপভু (apogee) উপগ্রহের উপবৃত্তাকার কক্ষপথের দুরতম বিন্দুকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অপy বা অ্যাপােজি বলা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়- চন্দ্র পৃথিবীর উপগ্রহ। পৃথিবী হইতে চন্দ্রের দূরত্ব মােটামুটি ৩৮৬২৩২ কিলােমিটার (প্রায় ২৪ ০ ০ ০ ০ মাইল ) ধরা হইলেও ইহার। কক্ষপথের দূরতম বিন্দু অর্থাৎ অপভৃ ৪০ ৬৭০ ২ কিলােমিটার ( প্রায় ২৫২৭২০ মাইল) দূরে অবস্থিত। কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ডের উপবৃত্তাকার কক্ষপথের দূরতম বিন্দু অর্থাৎ অপভূর দূরত্ব অনুমিত হইয়াছে ২২৫৩ হইতে ২৫৭৪। কিলােমিটারের ( প্রায় ১৪০০ হইতে ১৬০০ মাইলের ) মধ্যে। পৃথিবী হইতে কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরারের অ্যাপােজি বা অপভূর দূরত্ব হইল ১৮০৯ কিলােমিটার ( প্রায় ১০০০ মাইল )।

গােপালচন্দ্র ভট্টাচার্য
অপভ্রংশ ভাষা খ্ৰীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে বৈয়াকরণ পতঞ্জলি অপভ্রংশ শব্দটি সংস্কৃত হইতে উদ্ভূত অথচ শিষ্ট ভাষায় অচল এমন শব্দ বুঝাইতে ব্যবহার করিয়াছিলেন। আমরা এই অর্থে এখন পালি ও প্রাকৃত (অর্থাৎ মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা) শব্দ ব্যবহার করি। সবচেয়ে প্রাচীন প্রাকৃত-ব্যাকরণের রচয়িতা বররুচি তাহার প্রাকৃত প্রকাশে অপভ্রংশ নাম করেন নাই। পুরুষােত্তম প্রভৃতি পরবর্তী প্রাকৃত বৈয়াকরণগণ অপভ্রংশের উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু। তাহারা স্পষ্টভাবে অপভ্রংশকে প্রাকৃতের নব্য অথবা। সরলতররূপ বলেন নাই। তাহারা অপভ্রংশ বলিতে একাধিক ভাষা বুঝিয়াছেন। তবে অপভ্রংশের বর্ণনায় প্রধানতঃ নাগরক (অথবা নাগর অপভ্রংশ) -ই ধরিয়াছেন। সাহিত্যে এই নাগর অপভ্রংশের নিদর্শন আমরা পাইয়াছি। সাহিত্যের ভাষা হিসাবে নাগর অপভ্রংশ সমগ্র উত্তরাপথে । এবং দক্ষিণাপথের উত্তরভাগে সংস্কৃতের দোহার রূপে। প্রচলিত হইয়াছিল।

এখন আমরা ভাষাবিজ্ঞানে অপভ্রংশ শব্দটির পারিভাষিক অর্থ গ্ৰীয়র্সনের অনুসরণে একটু বদলাইয়া লইয়াছি। | প্রত্যেক আঞ্চলিক নব্য ভারতীয় আর্যভাষা কোনও না। কোনও মধ্যভারতীয় আর্যভাষা (প্রাকৃত) হইতে আসিয়াছে এই অনুমান করিয়া গ্ৰীয়র্সন এই সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে | প্রত্যেক প্রাকৃত হইতে এক বা একাধিক) অপভ্রংশ উদ্ভূত হইয়াছিল এবং সেই সব আঞ্চলিক অপভ্রংশ হইতে বাংলা হিন্দী পাঞ্জাবী রাজস্থানী সিন্ধী গুজরাটী মারাঠা ইত্যাদি প্রাদেশিক (নব্যভারতীয় আর্য) ভাষাগুলি উৎপন্ন হইয়াছে। তদনুসারে আমরা অনুমান করি যে পূর্বভারতে প্রচলিত প্রাকৃত হইতে পূর্বী অপভ্রংশ উৎপন্ন হইয়াছিল এবং সেই পূর্বী অপভ্রংশ হইতে ভােজপুরী মহী মৈথিলী এই তিন বিহারী ভাষা এবং বাংলা অসমীয়া ও ওড়িয়া এই তিন গৌড়ীয় ভাষা উৎপন্ন। সাহিত্যে যে অপভ্রংশের নিদর্শন পাইতেছি অর্থাৎ যাহাকে পুরুষােত্তম প্রভৃতি নাগরক বলিয়াছেন তাহা, গ্ৰীয়র্সনের মতে, পশ্চিমা অপভ্রংশ শৌরসেনী। ইহা শৌরসেনী প্রাকৃত হইতে জাত এবং পশ্চিমা হিন্দী প্রভৃতি ভাষার জনক। বলা বাহুল্য পূর্ব দক্ষিণী ইত্যাদি কোনও আঞ্চলিক অপভ্রংশের কোনও নিদর্শন পাওয়া যায় নাই। গ্ৰীয়র্সনের মতে অপভ্রংশের কাল আনুমানিক ৫০০ হইতে ১০০০ খ্রীষ্টাব্দ।

সুকুমার সেন
অপভ্রংশ সাহিত্য ভাষাতত্ত্ববিং পণ্ডিত মধ্যভারতীয় আর্য বা প্রাকৃত ভাষাকে যে তিনটি স্তরে ভাগ করিয়াছেন, তাহার অন্তিম স্তরের নাম অপভ্রংশ। ইহার প্রচলনকাল আনুমানিক খ্ৰীষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী হইতে দশম শতাব্দী পর্যন্ত। ভাষার গঠনমূলক অবস্থানকাল দশম শতাব্দী পর্যন্ত হইলেও খ্ৰীষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্য রচিত হইয়াছে। সংস্কৃতের বিকৃতিমাত্রই প্রাচীনকালে অপভ্রংশ বলিয়া বিবেচিত হইত। পাণিনি এই বিকৃতিকে ভাষা ও বার্তিককার অপশব্দ বলিয়াছেন। মহাভাষ্যকার পতঞ্জলি দেখাইয়াছেন, একটি সংস্কৃত শব্দ হইতে নানারূপ অপভ্রংশ শব্দের উৎপত্তি হইতে পারে। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে ( ২য় বা ৩য় শতক) সংস্কৃত এবং দেশী ভাষা হইতে পৃথক ভাষা হিসাবে ‘অপভ্রষ্ট’ বা ‘বিভ্রষ্ট ভাষার উল্লেখ আছে। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে (১৭৩, ৬১ ) অপভ্রংশ ভাষার কিছু লক্ষণও উল্লিখিত হইয়াছে। ভরতের মতে উহা আভীরী অপভ্রংশ —উহা নিম্নশ্রেণীর লােকের মধ্যে প্রচলিত ছিল। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে (১৭৬৬, ৭৪, ৯৯ প্রভৃতি) কতকগুলি অপভ্রংশ শ্লোকও উদ্ধৃত হইয়াছে। পরবর্তীকালীন বৈয়াকরণদের
৭০