পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চীনেম্যানের চিঠি।
৬৭

প্রচণ্ড পশুশক্তিকেও এই কর্তৃপক্ষদের দলভুক্ত করিয়া সামঞ্জস্যসাধন করিতে চাহে। কিন্তু তোমাদের দেশে জনসাধারণও যে একটা অভয় বিশেষ দল—তাহাদেরও একটা দলগত সঙ্কীর্ণ স্বার্থ আছে। তোমাদের এই যন্ত্রটার উদ্দেশ্য দেখিতেছি, একটা গর্তের মধ্যে কতকগুলা প্রাইভেট স্বার্থের আত্মম্ভরী শক্তিকে ছাড়িয়া দেওয়া,—তাহারা শুদ্ধমাত্র পরস্পর লড়াইয়ের জোরেই সাধারণের কল্যাণে উপনীত হইবে। ধর্ম্ম এবং সদ্বিবেচনার কর্তৃত্বের উপর চীনেম্যানের এমন একটা মজ্জাগত শ্রদ্ধা। আছে যে, তোমাদের এই প্রণালীকে আমার ভালই বোধ হয় না। তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অন্যত্র আমি এমন সকল লোক দেখিয়াছি, যাহারা তোমাদের ব্যবস্থাযোগ্য সমস্ত বিষয়গুলিকে সুগভীরভাবে আলোচনা করিয়াছেন, যাহাদের বুদ্ধি পরিষ্কৃত, বিচার পক্ষপাতশূন্য, উৎসাহ নিস্বার্থ এবং নির্মল,—কিন্তু তাঁঁহারা তাঁঁহাদের প্রাজ্ঞতাকে কোন কাজে লাগাইবার আশাও করিতে পারেন না—কারণ, তাঁঁহাদের প্রকৃতি, তাঁহাদের শিক্ষা, তাঁঁহাদের অভ্যাস, জানপাদিক ইলেকুশনের উপদ্রব সহ করিবার পক্ষে তাহাদিগকে অপটু করিয়াছে। পার্লামেণ্টের সভ্য হওয়াও একটা ব্যবসাবিশেষ—এবং ধর্ম্মনৈতিক ও মানসিক যে সকল গুণ সাধারণের মঙ্গলসাধনের জন্য আবশ্যক, এই ব্যবসায়ে প্রবেশ করিবার গুণ তাহা হইতে স্বতন্ত্র বলিয়াই বোধ হয়!

 আমি সংক্ষেপে চীনেম্যানের পত্রের প্রধান অংশগুলি উপরে বিব্রত করিলাম। এই পত্রগুলি পড়িলে প্রাচ্যসমাজের সাধারণ ভিত্তি-সম্বন্ধে আমাদের পরস্পরের যে ঐক্য, তাহা বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়। কি ইহাও দেখিতে পাই, এই যে শাকি এং শৃঙ্খলা, সন্তোষ এবং সংযমের উপরে সমস্ত সমাজকে গড়িয়া ভোলা-তাহার চরম সার্থকতার কথা এই চিঠিগুলির মধ্যে পাওয়া যায় না। চীনদেশ সুখী, সন্তুষ্ট, কর্ম্মনিষ্ঠ হইয়াছে, কিন্তু সেই সার্থকতা-পায় নাই! অসুখে-অসন্তোষে মানুষকে