পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و برای যাইতেছিল—কৃষ্ণ পক্ষ্মের তলে চক্ষু দুটি যেন শ্বেতপদ্মের মত ! আমি তাহারি প্রতি চাহিয়াছিলাম। পেপা বলিল, “একটু পড়ি এস ! এখনো ত আলো রয়েছে ; বই নেই তোমার কাছে ?” পকেটে একখানি ভ্রমণকাহিনী ছিল —তাহার পৃষ্ঠা খুলিলাম। আমার স্বন্ধে মাথা রাখিয়া সে পড়িতে লাগিল—আমার পূৰ্ব্বেই তার পাঠ শেষ হইতেছিল—তার বুদ্ধিও বেশ তীক্ষ্ণ ! পাঠ শেষ করিয়া আমার পানে চাহিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার পড়া হয়েছে ?” আমি তখন সবেমাত্র পড়া সুরু করিয়াছি ! আমাদের উভয়ের কেশাগ্র পরস্পর স্পর্শ করিল, তার নিশ্বাস বায়ু আমার গালে লাগিল, তার পর উভয়ের ওষ্ঠও মিলিল ! আবার যখন বই খুলিলাম, তখন মাথার উপর এক আকাশ নক্ষত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে ! গৃহে ফিরিয়া সে ডাকিল, “মা, মা, আজ আমরা খুব ছুটেছি!” আমার মুখে কথা বাধিয়া গেল ! তিনি বলিলেন, “তুই যে কিছু বলছিস না রে ? তোর মুখ যে শুখিয়ে গেছে— মনে দুঃখ হয়েছে নাকি কিছু ?” দুঃখ ! আননে আমার হৃদয়ের দুই কুল যে ছাপিয়া গিয়াছে ! সেই স্নিগ্ধ সুন্দর সন্ধ্যার কথা, জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্ত অবধি ভুলিতে পারিব না যে ! জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্ত—? হায়, তার আর বিলম্বই বা কি ? \D কল্পট বাজিয়াছে জানি না ! কিসের ভারতী । অগ্রহায়ণ, ১৩১৭ একটা মিশ্র শব্দ ভ্রমর-গুঞ্জরের মত কাণে আসিতেছে! বুঝি আমারি শেষ চিন্তাগুলা মাথার মধ্যে এক বিরাট কোলাহুল বাধাইয়া निम्नांtछ् ! অ{মার অপরাধের কথা ভাবিতে সৰ্ব্বাঙ্গ শিহুরিয়া উঠিতেছে, কিন্তু এ অনুতাপ আর কতটুকু সময়ের জন্তই বা ! দণ্ডের পূৰ্ব্বে অনুতাপের বোঝা যে বুকে চাপিয়াছিল, এখন মৃত্যুর কথা ছাড়া আর কিছুর জন্য ত আমার হৃদয়ে স্থান নাই ! অতীতের কথা ভাবিতে গেলেও—ফাসির রজুর কথাটা যে ভুলিতে পারি না ! মধুর শৈশব, গৌরবোজ্জ্বল কৈশোর, আজ এমনি রক্ত মাখিয়া সে অবসিত হইবে ! অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একটা রক্তন,দীর ব্যবধান ! যদি কেহ অসুগ্ৰহ করিয়া আমার এ জীবনের কাহিনী পাঠ করেন ত ঘৃণায় বিভীষিকায় কতখানি তিনি শিহরিয়া উঠিবেন । এ কি বিশ্বাসের যোগ্য কথা ! কি রক্তপিপাসী আইন ! হা নিষ্ঠুর মানুষ—আমি কি এমনি মন্দ ? না, কখনো না ! আর কয় ঘণ্ট। পরেই সকল চিত্ত সকল ভাবনার সুগভীর সমাপ্তি ! অথচ সে আজ কত দিনই বা, যখন শুদ্ধ স্বাধীন চিত্তে নদীর তীরে, বৃক্ষের তলে, পত্র-মৰ্ম্মর পথে স্বচ্ছন্দ গত্তিতে বেড়াইয়া আমার দিন কাটিত ! ७२ আমার এ রদ্ধ ঘরেরই অনতিদূরে সুখের গৃহগুলি তরুণতরুণীর মুখগুঞ্জন, ও শিশুর ললোচ্ছাসের বিহ্বল রাগিণীর উচ্ছাসে পরিপূর্ণ—আশা-নিরাশার ও মুখ-দুঃখের ভার লইয়। অসংখ্য নরনারী পথে চলিয়াছে !