পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, নবম সংখ্যা । অধিকাংশ পদ্য, অল্প গদ্য । আমার মতে এই পদ্যের অল্প বিস্তর বৃদ্ধ সুশ্রীতের বচন হইতে পারে । কল্প ও উত্তর তন্ত্র সম্পূর্ণ পদ্যে রচিত। ইহা নাগাৰ্জ্জুন কর্তৃক রচিত । ভাষা মার্জিত প্রাঞ্জল ও প্রসাদগুণবিশিষ্ট, বিষয় মনোহারী ;–পীঠে পুরাকালের অনেকানেক তত্ত্বের অবগতি হয় । র্যাহারা ইহা একবার পড়িয়াছেন তাহারী ভগবান ধন্বন্তরির অসীম জ্ঞানরাশির পরিচয় পাইয়। চমৎকৃত হইবেন সন্দেহ নাই । আর যে ধৃষ্টবুদ্ধিগণ আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসার বহুমান করিয়া নিজের বস্তুকে অকিঞ্চিৎকর মনে করেন তাহার ধৈর্য্যাবলম্বন করিয়া পাঠ করিলে নিজের দুবুদ্ধিতাকে ধিক্কার দিয়া লজ্জিত হইবেন! আত্ৰেয় শিষ্য অগ্নিবেশ স্বীয় নামে যে তন্ত্র প্রণয়ন করেন তাহ পরবর্তী কালে চরক ঋষি কর্তৃক প্রতিসংস্কৃত হইয়া চরক নাম ধারণ করিয়াছে। এই চরকে যে অভাব ছিল তাহা পঞ্চনদবাসী বিদ্বান দৃঢ়বল পূরণ করেন এবং কল্প ও সিদ্ধিস্থান গুলিও ংযোজিত করিয়া দেন –যথা অস্মিন সপ্তদশীধ্যায়াঃ কল্প সিদ্ধয়ঃ এব চ। নাস্তান্তস্তেহগ্নিবেশস্ত তন্ত্রে চরক সংস্কৃতে ॥ অখণ্ডার্থঃ দৃঢ়বলোজাতঃ পঞ্চনদেপুরে । কৃত্ব বহুভ্যস্তন্ত্রেভ্যে বিশেষাচ্চবলোচ্চয়ং । সপ্তদশোঁষধাধ্যায়ান সিদ্ধিকল্লৈরপূরয়ৎ। চরক চিকিৎসাস্থান ৩০ অধ্যায় ! অর্থাৎ—চরক সংস্কৃত অগ্নিবেশভন্ত্রে ১৭ অধ্যায়ে পূৰ্ব্বকল্প ও সিদ্ধি সন্নিবিষ্ট ছিল না তাংt পঞ্চনদবাসী দৃঢ়বল চরক সম্পূর্ণ করিবার জন্য যোজনা করিয়াছেন । ইনি নিজের নাম প্রকাশ করিয়া দিয়াছেন, স্বত্ৰত । ፃ:ጳ নাগাৰ্জ্জুন তাহ করেন নাই ; কেন ইহা জিজ্ঞাসিত হইতে পারে ? নাগাৰ্জুন জনৈক বৌদ্ধনৃপতি ছিলেন। রাজতরঙ্গিনীমতে ,ইনি কাশ্মীররাজ অভিমন্ত্র্যর রাজ্যকালে প্রাজুভুত হন এবং সেই সময় বৌদ্ধগণ প্রবল হওয়ায় কাশ্মীরও শাসন করিয়াছিলেন যথা,— অবিভুবাভিমত্যুঃ শতমমুরিবাপরঃ । তস্মিল্লবসরে বৌদ্ধাঃ দেশে প্রবলতাংযযুঃ । নাগাৰ্জ্জুনেন সুধিয়া বোধিসত্ত্বেন পালিতা। এই বিদ্বান নাগাৰ্জ্জুন মহাযান নামক বৌদ্ধধৰ্ম্ম পদ্ধতি নিয়ামকগ্রন্থ প্রণয়ন করেন। সুতরাং ইহার প্রতিসংস্কারের অধীনে পড়িয়া বুদ্ধ সুশ্রুত মাংসবর্জিত কঙ্কালে পরিণত হইয়াছেন। পরবর্তী কালে হিন্দুর নিকট বৌদ্ধগ্রন্থের যে বিষম পরিণামের বিষয় শ্রুত হওয়া যায়, বৌদ্ধপ্রভাবকালে হিন্দুগ্রন্থের প্রতি সেপ্রকার কিছু হইয়াছিল কিনা তাহ শ্রত হওয়া যায় না। তবে চিকিৎসাশাস্ত্র মানব ও জীবজন্তুর প্রতি হিতকর বলিয়া এই শাস্ত্রে তাহারা হস্তক্ষেপ করিয়াছিলেন। অন্ত সাধারণ ঋষিপ্রণীত গ্রন্থে হস্তক্ষেপ করিতে সাহস হয় নাই বলিয়া স্বয়ং বিক্রমশালী রাজা তাহার সংস্কারে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । তিনি প্রতি সংস্কারে মনোনিবেশ কঞ্চিয়। ঋষির পদ্যগ্রথিত অংশের বিলোপ সাধন করিয়া তাহার ভাবার্থমাত্র গদ্যে প্রকাশ করিয়াছেন। টীকাকারগণের উদ্ধারদ্বারা বোধ হয় ইনি বৃদ্ধমত্ৰতের অনেক অংশ বাহুল্য বোধে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। সুতরাং ইহাতে ত্রিকালজ্ঞ ঋষির রচনার অভাব স্বভাবতঃ আমাদের মনকে বিকল করিতেছে।