পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা । উঠে ! হাত পায়ের তলাগুলা অসাড় হিম হইয়া অtসিতে থাকে। মণিমালা তাহার দুইটি পুত্র কন্ত। সঙ্গে লইয়া আসিয়া পৌছিলে যোগেন্দ্রের হাত হইতে আপাতত রক্ষা পাইল মনে করিয়া নীরদ কতকটা আরাম বোধ করিতে লাগিল । সন্ধ্যাবেল ছেলেদের লইয়া গল্প করিয়া রাত্রে যখন সে শয়ন করিতে গেল,—কল্যাণময়ী জননীর মত সৰ্ব্বসস্থাপহরা নিদ্রাদেবী তাহার শ্রাস্ত ললাটের উপর কোমল হাতখানি বুলাইয়া দিলেন। প্রভাত আবার যুদ্ধের সাজে সাজিয়া আসিল । আবার সেই জীবন-সংগ্রামে হৃদয়ের সহিত ধস্তাধস্তি । বিদ্রোহী চিত্তকে সহজ প্রলোভনে ভুলাইয়া বশীভূত করিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্ট ! তখনও ঠিক প্রভাত হয় নাই। দূরে পুৰ্ব্বাকাশের একটি প্রান্ত সবেমাত্র লাল হইতে আরম্ভ করিয়াছে। পার্থীর সদ্য জাগ্রত হইয়া আপনাদিগের শিশু শাবকগণের সহিত আলাপ শেষ করিয়া দিবসের মত বিদায় লইতেছিল। দুইটী পক্ষী-দম্পতী একটি গাছের ডালের কাছাকাছি বসিয়া এদিক ওদিক চাহিয়৷ দেখিতেছে । মনদরের প্রাঙ্গণ হইতে বালক দের সমবেত কণ্ঠেচ্চিারিত সংস্কৃত স্তব আবৃত্তির গাম্ভীৰ্য্যময় ঝঙ্কার স্তব্ধ প্রভাতের বা তাসে-আকাশে কম্পি ত হইতে লাগিল । মন্ত্রমুগ্ধের মত নীরদ এক পা এক পা করিয়া অগ্রসর হইতে হইতে কোন এক সময়ে আসিয়া তাহাদের সহিত যোগদান করিল । সেই দিন আসন্ন সন্ধ্যার ছায়াচ্ছন্ন কাননপথে ফিরিতে ফিরিতে গ্রামের বৈরাগী যখন পোষ্যপুত্র । C & Go খঞ্জনী বাজাইয় আপন মনে গাহিয়া চলিয়াছিল, “সামাল মাঝি এই পারাবারে বান ডেকেছে সাগরে ৷ এবার তোমার দফা, হল রফ, পড়ে গেলে ফাপরে”—তখন পাশে বেড়। ধরিয়া দাড়াইয়া নীরদ আপনার মনের সহিত শত-শত প্রশ্নোত্তর করিতেছিল। যুদ্ধ শেষ হইয়া আসিয়াছে । কল্য প্রভাতেই জীবন-ব্যাপী মহাসমরের সমাপ্তি--তার পর ? তারপর কি অপূৰ্ব্ব শাস্তি, অটুট মুখ ! লুব্ধ বালকের মত আপনাকে আপনি সে ভুলাইতেছিল। গান একটা সামান্ত ভিক্ষাজীবি গ্রাম্য বৈরাগীর অশিক্ষিত কণ্ঠের স্বাভাবিক স্বরমাত্র, সারাদিনের ধূলি-রৌদ্রমাথা ক্লাস্তচিত্তের একটুখানি আত্মতৃপ্তি, কিন্তু নীরদের কানে ইহা আজ ংসারের মধ্যে সব চেয়ে মিষ্ট ও মধুর ঠেকিল। বৈরাগী যেন তাহার সঙ্কট বুঝিয়া দুরন্ত পারাবারে ভাসমান নৌকাখানিকে প্রাণপণে সামলাইতে বলিতেছে! বান ডাকিয়াছে, যদি সে সাবধান না হয়, তাহার ক্ষুদ্রতরী রক্ষা করা দায় হইয়া উঠিবে। কয়দিন সমস্ত মানসিক শক্তি খরচ করিয়া করিয়া আর সব মীমাংস এক রকম সে করিয়া আনিয়াছে ; কিন্তু একটা অদম্য লজ্জা সে কিছুতে পরিত্যাগ করিতে পারিতেছিল না। লক্ষ্মীপুরে সে কাহার প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া দাড়াইবে ? সে যে শাস্তির স্বামীকে তাহার স্বৰ্ব্বস্ব দান করিয়া দিয়াছে । আবার কি সে দান ফিরাইয়। লইবে ? নীরদের আরক্ত মুখ বিবর্ণ হইয়। গেল, তাহার চঞ্চল হৃৎপিণ্ড পুনঃপুনঃ নিশ্চল হইয়া পড়িতে লাগিল । ঘড়িতে যেন দম আর একটুও নাই। সামলান বুঝি দায় হয়, ধাত্রী