পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬২ উঠিয়াছিল, কিন্তু সে অত্য স্তু অস্ফুট, কারণ বিপিনবাবু জমিদার ! কলিকাতায় যখন বিপিনবাবু ছিলেন তখন দেশের লোকে বাচিয়াছিল—তিনি যখন ফিরিলেন, তখন তাহারা প্রমাদ গণিল । 8 কিছুদিনের মধ্যেই সন্ন্যাসীর কতকগুলি ভক্ত এবং বন্ধু জুটিয়া গেল । জমিদারকন্ত। মন্দা দ্বিতীয় দলের অন্তভুক্ত। দুপুরবেলা একটা ছিন্ন বই হাতে লইয়া মন্দ আসিয়া উপস্থিত, “সন্ন্যাসী ঠাকুর—” সন্ন্যাসী ধ্যান-মগ্ন ছিল, চোখ খুলিয়া বলিল “মা এসেছ ?—এই দুপুর রৌদ্রে ঘুমেলেন কেন ?" মন্দ প্রবলভাবে ঘাড় নাড়িয়া কহিল “নাঃ,—কত পড়েছি আপনাকে তাই দেখাতে এলাম,—আর একটা জিনিষ এনেছি সন্ন্যালী ঠাকুর—” ধ্যান অগত্য বন্ধ রাখিতে হইল। সন্ন্যাসী কহিল, “কি, দেখি ?” কাপড়ের ভিতর হইতে একটা পুতুল বাহির করিয়া মন্দা কহিল, “এ হচ্ছে বড় বে। আরো মেজ বেী, সেজ বেী, ন বেী, ছোট বেী, ঘরে আছে, নিয়ে আসব ?” সন্ন্যাসী হালি কহিল, “ন থাকৃ, আজ আর আনতে হবে না, কাল এ না।” তখন বড় বেীকে কোলে রাখিয়া মন্দা তার ঘর করার কথা পাডুিল। “ওদের বাড়ীর কুন্দর ছেলের সহিত বড় বেীএর মেয়ের এই সে দিন বিবাহ হইয়া গেছে—তাতে কত ঘটা কত আমোদ !” ছোট দুইখানি খাত ঘুৱাই ৷ মলা। তাছারই কথা বলিতে লাগিল । ভারতী । কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ সন্ন্যাসীর কঠিন হৃদয় আর্দ্র হইয়া উঠিতেছিল, চোখে জল আসিয়াছিল। এই একটা অবোধ ছোট মেয়ে,— কি জানি কেন এর এত মোহ ! সে তার ছোট দুখানি হাতে এমন সুদৃঢ় বন্ধন রচনা করিয়াছে যে, এই দীর্ঘ আট বৎসরের কঠিন সংযমেব পরও সন্ন্যাসী সে বন্ধনে বদ্ধ হইয় পড়তেছিল। ওই তার স্বন্দর মুখখানি—সে কাহার কথা মনে করাইয় দেয় ! কিসের একটা আভাষ — কিসের একটা স্মৃতি ! নদীর জল ছলছল করিতে থাকে, গাছের পাতায় হাওয়া গিৰ্ব সির করিয়া উঠে, চোখের জল কোন রকম করিয়া ঢাকিয়া সন্ন্যাসী মন্দাকে বুকের মধ্যে টানিয়া লইয়া বলে, “যাও মা, বাড়ী যাও, বেলা পড়ে আসছে ।" অনর্গল কথা বলিতে বলিতে হঠাং মন্দা থামিয়া যায়—“সন্ন্যাসী ঠাকুর, আপনার চোথে জল কেন ?” সন্ন্যাপী হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলে “আমার কি চোখে জল আসে মা ? ঐ হোমের আগুনে সব শুকিয়ে গেছে—” মন্দ। গলা জড়াইয়া ধরে “কিস্তু ঐ ত’ রয়েছে—” তখন অশ্রুজগ উচ্ছসিত হইয়। উঠে । মন্দার মুখচুম্বন করিয়া সন্ন্যাসী তাহাকে বাড়ী পাঠাইয়া দেয় । (R বাড়ীতে ইহার জন্ত মন্দাকে অল্প লাঞ্ছন! সন্থ করিতে হইত না। তাহার ঠাকুমা দেখিবামাত্র তাহাকে শাসন করিতেন, কহিতেন, “কোথা গিয়েছিলি রে ?” মন্দা একটা ঢোক গিলিয়। বলিত, “ঘাটের ধারে ।”