পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సెశి 8 ভারতী । ফাল্গুন, ১৩১৭ ক্রমবিকাশে অভ্যাসের প্রভাব । সমগ্র মানবজাতির ইতিহাস পর্য্যবেক্ষণ করিলে স্থলতঃ দেখা যায় যে দুইটি স্বাভাবিক নিয়মের বশে মানবের সমস্ত কাৰ্য্য ও ব্যবহার পরিচালিত হইতেছে । মানব জ্ঞাতসারে হউক আর অজ্ঞাতসারেই হউক সেই দুই নিয়মের বশীভূত হইয়া জন্ম হইতে মৃত্যু পৰ্য্যস্ত সকল অবস্থায় সকল সময়েই কাৰ্য্য করিয়া থাকে। প্রথম অভ্যাস ; দ্বিতীয় বংশানুগত্য ; এই দুইটি স্বাভাবিক নিয়ম । প্রথম নিয়ম অভ্যাসমূলক (Law of IIabit)। ভূমিষ্ট হইবার সময় মানব অভ্যাসের সম্পূর্ণ অনায়ত্ত । ক্রমশ: যেমন তাহার ইন্দ্ৰিয়বৃত্তি সতেজ হইতে থাকে, অভ্যাস তাহার উপর প্রভাব বিস্তার করে। নবজাত শিশুর চক্ষু উল্মীলিত হয় বটে, কিন্তু সে উহার ব্যবহারে অক্ষম । কারণ পূৰ্ব্ব হইতে তাহার অভ্যাস নাই । তাহাব পক্ষে সমস্ত জগৎ গভকোটরের দ্যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন । সে চতুর্দিকে অন্ধকার দেখাই অভ্যাস করিয়াছে ও সেই অভ্যাসপ্রযুক্ত সকল দি কষ্ট অন্ধকার দেখে । এক দিন, দুষ্ট দিন, করিয়া প্রত্যহ তাহার সে অভ্যাস মন্দীভূত হইয়া আসে—সে আলোক দেখিতে অভ্যস্ত হয় । আগ্রহের সহিত আলো দেথিতেই তখন তাহার সুখ বোধ হয়। ঐ মুখের লালসায়, ঐ মুখ বোধের প্ররোচনায়, সে কেবল আলো দেখিলেই সুখী হয় বলিয়। ক্রমশঃ তাহার আলোকের জ্ঞান আসিয়া উপস্থিত হুয় তখনও কিন্তু কোন বস্তুর বিস্তার অবধারণ করিবার ক্ষমতা তাহার থাকে না । বৈজ্ঞানিকেরা বলেন যে সে সময় চক্ষুর আভ্যন্তরীণ রেটিন (Retina) নামক ঝিল্লি অপরিপক্ক থাকায়, সেখানে কোন দ্রব্যের ছায় পড়িলে উহাদ্বারা দর্শনেন্দ্রিয়ের স্নায়ুমণ্ডল উত্তেজিত হয় না, সুতরাং বাহ বস্তুর জ্ঞান মস্তিষ্কে পরিচালিত হইতে পারে না । ক্রমশঃ অভ্যাসের গুণে সে অভাবও দূরীভূত হইয়। যায় এবং অভক সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রাপ্ত হইয়৷ অমিধ্বচনীয় আনন্দ পায়। চক্ষুর সম্মুখ ভাগে যে মমুরাকৃতি ক্ষুদ্র স্বচ্ছ পুটক (crystalline lens) আছে, উহার আলোকরশ্মি বক্রীকরণের ক্ষমতা আছে। সই বক্রীভূত আলোকয়াখার সম্মিলনে সম্মুখস্থিত বস্থর আকৃতিযুক্ত একটি ছায়। রেটিনায় আসিয়া প্রক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু যেমন ফটো ক্যামেরার কাচে, বা ম্যাজিকলণ্ঠন, বায়োস্কোপু প্রভূতি আলোক যন্ত্রেব দ্বারা প্রক্ষিপ্ত ছবি বাহ বস্তুর বিপৰ্য্যস্ত প্রতিকৃতি, উহার উল্টা ছায়া, সেইরূপ রেটিনার ছবি ও উলট । বাহ বস্তুব উপরিভাগের ছাপ্পা বঐ ভুত হইয়া রেটিনার নিম্নদেশে পড়ে এবং ছবি উলটা দেখায় । শিশু প্রথমতঃ সমগ্র বস্তু উলটা দেখে—তাহার ঐরূপ দেখিয়া দেখিয়া অভ্যাস হইয়া যায়, এবং প্রবীণ চক্ষুতে উলটা ছবি পড়িলেই সেই ছবি যে বস্তুর, সেই বাহবস্তু যে সোজা তাহাই বুঝিবার অভ্যাস আসিয়া পড়ে। ছবি উলটাই পড়ে, আমাদের অভ্যাসবশতঃই আমরা সোজা দেখি । যেরূপ চক্ষু, সেইরূপ কৰ্ণ প্রভূতি অপর অপর ইন্দ্ৰিয়বোধ ও অভ্যাস সাপেক্ষ ।