পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, দ্বাদশ সংখ্যা । গণেশ গজমুণ্ডধারী, লম্বোদর, গোলাপী-রং ; কৃষ্ণবর্ণ বিকট দর্শন কালীদেবী, বক্ষের উপর শোণিতাক্ত নরমুণ্ডমালা ধারণ করিয়া व्षांtछ्न । প্রভাতে, গঙ্গার ধারে শতসহস্ৰ স্ত্রী ও পুরুষ স্নান করিতেছে, স্বানের সঙ্গে কত ক্রিয়াকাণ্ডের অনুষ্ঠান হইতেছে ; কেহ বা, শাস্ত্রের নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে শরীরেব সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জলে প্রক্ষালন করিতেছে ; প্রক্ষালন কালে,শরীরের মধ্যে যে অবয়বটি সব্বাপেক্ষা পবিত্র সেই দক্ষিণ কর্ণকেও ভুলিতেছে না ; কেহ বা অঞ্জলীতে জল লইয়া, সন্মুখভাগে যুতদূর সম্ভব দূরে ছিটাইয়া ফেলিতেছে ; কেহ বা বৃক্ষশাখা লইয়া, জল-তরঙ্গের উপর তালে-তালে আঘাত করিতেছে ; কেহ বা মল্লিকা কিংবা গোলাপের পাপড়ি জলে নিক্ষেপ করিতেছে ;– সেই সব ফুল, স্তানে স্থানে গঙ্গাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে ; কেহ বা কষুেক বার ঘোর-পাক খাষ্টয়া আপনার নাকে চিম্টি কাটিতেছে,বুক চাপড়াইতেছে; কেহ বা নিশ্চলভাবে দাড়াইয়া, নীল-আকাশে স্থয্যের উদয় নিরীক্ষণ করিতেছে । তীর্থযাত্রীর পবিত্র গঙ্গাজলে তাঙ্গাদেব কমণ্ডলু ভরিতেছে—পবে - সেই জল ছিটাইয়া তাহদের গৃহকে পবিত্র করিবে। নদীর ধারে, চিতার উপর শব দাই হইতেছে ; মৃতজনের আত্মীয়েরা, শুভ্ৰ শোকবস্ত্র পরিধান করিয়া, মৃতজনের প্রিয় ভষ্ম গঙ্গাদেবীর পবিত্র জলে নিক্ষেপ করিতেছে••• এক দিন, একটু সহর ছাড়াইয়া, আমি নদীর উপর.নৌকা করিয়া বেড়াইতেছি, নদীর তটের উপর হইতে একটা মৰ্ম্মভেদী চীৎকার চঞ্জন— বারাণসী ৷ A • RY শুনিতে পাইলাম ; নিকটে গিয়া দেখিলাম, একজন হিন্দু একটা মৃত শিশুকে উঠাইতেছে। জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিল, সে এত দরিদ্র যে সে চিতার খরচ দিতে পারে না, তাই ঐ শিশুর মৃতদেহ গঙ্গাজলে নিক্ষেপ করিবে; কিন্তু নদী শিশুটিকে গ্রহণ করিতেছে না,—নদী-কিনাৰায়, স্রোতের এতটা জোর নাই যে উহাকে ভাসাঈয়া লইয়া যায়। সেই হতভাগ্য ব্যক্তি,—নেীকা করিয়া গঙ্গার মাঝপানে গিয়া মৃতশিশুটিকে ফেলিয়া দিবে---এই জন্ত অতি কাতর-স্ববে নেীকাভাড়ার কিছু পয়সা, আমার নিকট চাহিল। যখন অনুষ্ঠান পদ্ধতির নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে, শিশুটির অন্ত্যেষ্টি ক্রিয় সে সম্পন্ন করিতে পারিল, তখন তাহার মুখে যে আনন্দ ফুটিয়া উঠিয়াছিল, তাই আমি কখনও ভুলিবে না। এই প্রাচীন ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম মানুষকে হতবুদ্ধি ও বিমূঢ় করিয়া ফেলে। যেমন একদিকে বৌদ্ধধৰ্ম্ম জীবন্ত ও গভীর, তেমনি আবার,অন্ত দিকে ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম নিশ্চল ও উদ্ভট-কল্পনাময় । তথাপি, এই সমস্ত গৃঢ়-রহস্তময় সাঙ্কেতিক মূৰ্ত্তির আবরণের মধ্যে, এই সব অসঙ্গত অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপের অন্তরালে, একটা বিরাট তত্ত্বের ধারণ প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে। পৃথিবীব মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ পুবাতন এই যে ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম,— ইহার মধ্যে,সত্য ও মঙ্গণেব একটা মূল-আদর্শ আবিষ্কার করা যাইতে পারে। ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম যেমন একদিকে সমস্ত পরম্পরবিরুদ্ধ জিনিসগুলাকে সাদরে গ্রহণ করিয়াছে ; যেমন একদিকে, গ্রহনক্ষত্র, নদনদী, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু, দেব মনুষ্য-এই সমস্ত একত্র মিশাইয়া একটা অদ্ভূত খিচুড়ী প্রস্তুত