পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y? &W, দেখলুম তিনি বিশ্বের কল্যাণে প্রাণকে তুচ্ছ এবং দুঃখ অপমানকে গলার হার করে তুলচেন তখন তাদের প্রণাম করে আমরা বলুম এইবার মানুষকে দেখা গেল । সমস্ত বৈষয়িকতা, সমস্ত দ্বেষ বিদ্বেষ ভাগ বিভাগের মাঝখানে এইটি ঘটচে ; কিছুতেই এটিকে আর চাপা দিতে পারলে না । মানুষের মধ্যে এই যে অনন্তের বিশ্বাস, এই যে অমৃতের আশ্বাসটি বীজের মত রয়েছে বারম্বার দলিত বিদলিত হয়েও সে মরল না। এ যদি শুধু তর্কের সামগ্ৰী হত তবে তর্কের আঘাতে আঘাতে চূর্ণ হয়ে যেত, কিন্তু এ যে মৰ্ম্মের জিনিষ, মানুষের সমস্ত প্রাণের কেন্দ্রস্থল থেকে এ যে অনিৰ্ব্বচনীয়রূপে আপনাকে প্রকাশ করে। তাইত ইতিহাসে দেখা গেছে মানুষের চিত্তক্ষেত্রে এক একবার শত বৎসরের অনাবৃষ্টি ঘটেছে, অবিশ্বাসের কঠিনতায় তার অনন্তের চেতনাকে আবৃত করে দিয়েছে, ভক্তির রসসঞ্চয় শুকিয়ে গেছে, যেখানে পুজার সঙ্গীত বেজে উঠ ত, সেখানে উপহাসের অট্টহাস্ত জেগে উঠচে । শত বৎসরের পরে আবার বৃষ্টি নেমেছে, মানুষ বিস্মিত হয়ে দেখেছে সেই মৃত্যুহীন বীজ আবার নুতন তেজে অঙ্কুরিত হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে যে শুষ্কতার ঋতু আসে তারও প্রয়োজন আছে, কেননা বিশ্বাসের প্রচুর রস পেয়ে যখন বিস্তর আগাছ কাটা গাছ জন্মায়, যখন তারা আমাদের ফসলের জায়গাটি ঘন করে জুড়ে বসে, আমাদের চলবার পথটি রোধ করে দেয়, যখন তারা কেবল আমাদের বাতাসকে বিষাক্ত করে কিন্তু আমাদের কোনো খাদ্য ভারতী ফাল্গুন, ১৩২০ যোগায় না, তখন থর রৌদ্রের দিনই শুভদিন —তখন অবিশ্বাসের তাপে যা মরবার তা শুকিয়ে মরে যায়, কিন্তু যার প্রাণ আমাদের প্রাণের মধ্যে সে মরবে তখনি যখন আমরা মরব ; যতদিন আমরা আছি ততদিন আমাদের আত্মার খাদ্য আমাদের সংগ্ৰহ করতেই হবে-মানুষ আত্মহত্যা করবে না। এই যে মানুষের মধ্যে একটি অমৃত লোক আছে যেখানে তার চিরদিনের সমস্ত সঙ্গীত বেজে উঠছে আজ আমাদের উৎসব সেইখানকার । এই উৎসবের দিনটি কি আমাদের প্রতিদিন হতে স্বতন্ত্র ? এই যে অতিথি আজ গলায় মালা পরে, মাথায় মুকুট নিয়ে এসেছে এ কি আমাদের প্রতিদিনের আত্মীয় নয় ? আমাদের প্রতিদিনেরই পর্দার আড়ালে আমাদের উৎসবের দিনটি বাস করচে । আমাদের দৈনিক জীবনের মধ্যে অন্তঃসলিল হয়ে একটি চিরজীবনের ধারা বয়ে চলেছে, সে আমাদের প্রতিদিনকে অস্তরে অস্তরে রসদান করতে করতে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হচ্চে ; সে ভিতর থেকে আমাদের সমস্ত চেষ্টাকে উদার করচে, সমস্ত ত্যাগকে সুন্দর করচে, সমস্ত প্রেমকে সার্থক করচে । আমাদের সেই প্রতিদিনের অস্তরের রস স্বরূপকে আজ আমরা প্রত্যক্ষরূপে বরণ করব বলেই এই উৎসব—এ আমাদের জীবনের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন নয় । সম্বৎসরকাল গাছ আপনার পাতার ভার নিয়েই ত আছে ; বসন্তের হাওয়ায় একদিন তার ফুল ফুটে ওঠে, সেইদিন তার ফলের খবরটি প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেইদিন বোঝা যায় এতদিনকার