পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS), ভারত-প্ৰতিভা হইতে ১৮৯০ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যন্ত তিনি হয় মঠে থাকিতেন, নয় তা গুরুভ্রাতাদিগের কাহাকেও সঙ্গে লইয়া বৈদ্যনাথ, শিমুলতলা প্রভৃতি স্থান বেড়াইয়া আসিতেন। ১৮৯১ খৃষ্টাব্দে নিৰ্জনবাসের ইচ্ছা বলবতী হইল। সেই সময় নরেন্দ্র একাকী পরিব্রাজকরূপে যাত্ৰা করিলেন, মঠের কোনও সন্ন্যাসীকে সঙ্গে লইলেন না। প্ৰব্ৰজ্যাকালে তিনি সাধারণ সাধুর ন্যায় ভ্ৰমণ করিতেন। তঁহার অতুলনীয় পাণ্ডিত্য, প্রখরা বুদ্ধি যথাসাধ্য গোপন করিয়া তিনি চলিতেন । তিনি নিজে প্ৰকাশ না করিলে কেহ সহজে বুঝিতে পারিত না যে, তিনি একটি ইংরাজী বর্ণের সহিতও পরিচিত। অনেক সময় তিনি ভিক্ষা মোটেই করিতেন না । ইহার ফলে মাঝে মাঝে তঁহাকে একাদিক্ৰমে চরি৷ পাচ দিবস পৰ্য্যন্ত অনাহারে কালব্যাপন করিতে হইত। এ সকল কথা তিনি নিজেই বলিয়া গিয়াছেন। নানাস্থানে ভ্ৰমণ করিবার পর তিনি বারাণসীধামে গমন করেন। এক দিন দুৰ্গাবাড়ীর অভিমুখে যাত্রাকালে একদল বানর তঁহাকে আক্রমণ করে। এই সময়ে বানরের দল নিরীহ লোকের উপর গুরুতর অত্যাচার করিত। স্বামীজী তাহা জানিতেন, এজন্য তিনি উদ্বিগ্নভাবে কিছু দ্রুত চলিতে আরম্ভ করিলেন । বানরের দলও তদর্শনে লম্ফে লম্ফে তাহার পশ্চাদ্ধাবিত হইল। অকস্মাৎ একটি কণ্ঠস্বর তাঁহার কৰ্ণে প্রবেশ করিলা (~~ “খামো, থামো, সামনে দাড়াও।” স্বামীজী অবিলম্বে ফিরিয়া দাড়াইলেন। অমনি বানরের দলও থামিল। এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসী সেখানে আসিলে, তিনি বুঝিলেন, ইনিই তঁহাকে প্রাগুক্তরূপ উপদেশ দিয়া থাকিতে বলিয়াছিলেন। এই কথাটা স্মরণ রাখিয়া, উত্তরকালে বিবেকানন্দ আমেরিকায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলিয়াছিলেন, ‘প্রকৃতি, অবিদ্যা, মায়া ইহাদিগকে দেখিয়া কখনও কাপুরুষের ন্যায় পলায়ন করিবে না ; বীরের ন্যায় সম্মুখীন হইবে।”